আর্মেনীয়রা আঠারো ও উনিশ শতকের প্রথমদিকের ঢাকা শহরে বসবাসকারী একটি প্রভাবশালী সম্প্রদায়। এরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় দোকান খুলেছিল। তার মধ্যে শাঁখারীবাজারের ‘সিরকো অ্যান্ড সন্স’ অন্যতম। এ দোকানে চাসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় জিনিসপত্র বিক্রি হত। ১৮৫৬ সালে সিরকোই প্রথম ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন করেন যা তখন ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে পরিচিল ছিল।
পরবর্তীকালে ঘোড়ার গাড়ি বা ঠিকা গাড়িই ঢাকা শহরের প্রধান যানবাহনে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কালক্রমে যান্ত্রিক সভ্যতার বিকাশের ফলে ঐতিহ্যবাহী এ বাহনটি প্রায় বিস্মৃত হতে বসেছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য এ উপাদান।
তবে এখনো গ্রামগঞ্জে মাঝে মাঝে ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়ে। ঢাকা শহরেও এটি টিকে আছে অনেকটা ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে। একে এখন বলে টমটম। রাজধানী শহরে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে ঘোড়ার গাড়ি চোখে পড়ে।
এছাড়া বিভিন্ন উৎসব যেমন: বিয়ে, জন্মদিন, খৎনা, বর্ষবরণ কিংবা পূজা-পার্বনে ঘোড়ার গাড়িতে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেড়ানোর চল এখনো আছে।
যাতায়াতের অন্যান্য বাহনের মতো ঘোড়ার গাড়ির ভাড়াও স্থান ও দূরত্বের ওপর ভাড়া নির্ভর করে। ঢাকার ভেতরে ঘুরতে চাইলে ঘণ্টায় ১৫শ টাকা দিতে হয়। আর ঢাকার বাইরে ঘুরতে চাইলে ঘণ্টায় ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে।
আনন্দটাকে আরো বেশি উপভোগ করতে চাইলে ঘোড়ার গাড়িকে নিজের পছন্দমত নান্দনিকভাবে সাজাতে পারেন। নিজে সাজানোকে ঝামেলা মনে করলে ঘোড়ার মালিককে আলাদা খরচ দিতে পারেন। দামটা নির্ভর করবে সাজানোর জিনিসের ওপর। দাম পাড়বে ৭০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট যেতে মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ২০ টাকা।
স্রেফ আনন্দ উপভোগের জন্য প্রমোদযান হিসেবে ঘোড়ার চাহিদা যে এখনো ভালই আছে তার প্রমাণ মিলে গাড়ির মালিকদের দীর্ঘ শিডিউল দেখলে। চাহিদার বিপরীতে সংখ্যায় অপর্যাপ্ত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ভ্রমণের জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই বুকিং দিতে হয়। যেমন: নানা-নাতি টমটমের মালিক শফি মিয়া জানান, আমাদের কাছ থেকে ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া নিতে চাইলে ৭ দিন আগে বুকিং দিতে হবে।
তবে প্রাইভেট কার, স্পোর্টস কার এসবের দৌরাত্ম্যে ঘোড়ায় টানা মধ্যযুগীয় যানবাহন কতদিন টিকতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।