:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ ১৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে ঢাকায় ১৭ জন আর ঢাকার বাইরে ৪ জন মারা গেছেন।
শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬১৮ জনে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫৬ জনের আর ঢাকার বাইরে মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ২৩৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৮২ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৭০ জন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৮ হাজার ৬৩২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ৯০৩ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৭২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৯ হাজার ৫৯২ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৮ হাজার ১০২ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ জন। ঢাকায় ৫৫ হাজার ২৩৩ এবং ঢাকার বাইরে ৬৩ হাজার ২১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাইতে শনাক্ত ৪৩ হাজার ৮৫৪ জন এবং মারা গেছেন ২০৪ জন। আগস্ট মাসে শনাক্ত ৭১ হাজার ৯৭৬ জন এবং মৃত্যু ৩৪২ জন।
এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার অন্য বছরের তুলনায় বেশি। আর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং মারা গেছেন শক সিনড্রোমে। বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার ছিল শূন্য দশমিক এক থেকে শূন্য দশমিক দুই শতাংশের মধ্যে। এবার সেই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এ বছর মোট মৃত্যুর ৬৪ শতাংশ নারী এবং ৩৬ শতাংশ পুরুষ। তবে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, ৫৫ শতাংশ। শিশু আক্রান্তের হার ২১ শতাংশ।
২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই বছর ডেঙ্গুতে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০২ সালে মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এরপর গত ১৫ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৫ এর নিচে। তবে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১ লাখ ১ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে মারা যান ১৭৯ জন।
দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে ২০১৪ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল সবচেয়ে কম। ওই বছর ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই, তবে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৭৫ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ৬২ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্ত হন এবং মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। চলতি বছর প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ওই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এ বছর এই পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯ হাজার ৭১৬ জন। দৈনিক আক্রান্তের যে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে তাতে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।