:: ড. মো: নাজমুল হাসান রিফাত ::
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস বাহিত রোগ। যার নাম ফ্লাভি ভাইরাস। এডিস মশা (Aedes)দ্বারা এই ভাইরাস রোগ ছড়ায়।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা, করণীয় ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ
ডেঙ্গু জ্বর মূলত ২ প্রকার, ক্লাসিক্যাল এবং হেমরেজিক ডেঙ্গু।
অন্য সাধারণ জ্বরের মত ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর থেকে অতি সহজে মুক্তি পাওয়া গেলেও হেমরেজিক ডেঙ্গু জ্বর বা Dengue shock syndrome থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই জরুরী ভিত্তিতে উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।
যারা হেমরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তাদের সবাই Dengue shock syndrome-এ আক্রান্ত হবে তা নয়।
৫% ডেঙ্গু জ্বরের রোগী ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (Dengue shock syndrome) এ আক্রান্ত হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর কেমন হয়
মশার কামড়ের ৩-১৫ দিনের ভেতর জ্বর আসতে পারে। লাগাতার উচ্চ তাপমাত্রা (১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট) থাকবে। জ্বর থাকবে মোট ৭-৮ দিন।
৫-৬ দিন পর জ্বর নামতে শুরু করবে। সাধারনত যখন জ্বর নামতে শুরু করবে এক প্রকার লালচে দানা দেখা দিবে। তবে প্রথম ১-২ দিনেও হাল্কা লালচে দানা দেখা দিতে পারে।
জ্বর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি সময় সাপেক্ষ। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ
অধিকাংশ মানুষ জ্বর আসার আগেই মাথা ব্যথার অভিযোগ করে। তার সাথে শারীরিক দুর্বলতা, অস্বস্তিবোধ।
তারপর ১-২ দিন পর জ্বর আসে। কেবল জ্বর নয় কোমর ব্যথা, পিঠে ব্যথা, চোখ নাড়ালে ব্যথা, চোখ দিয়া পানি পরা, বমি ভাব, অবসন্নতা এবং হাত পা , কনুই, হাঁটু সহ অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকতে পারে।
তীব্র ব্যথা হয় বলেই ডেঙ্গু জ্বরকে মেডিকেল ভাষায় বলে break bone fever
হেমরেজিক ডেঙ্গুতে যা হয়
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের সব উপসর্গের সাথে সাথে আরও কিছু উপসর্গ থাকবে।
রক্ত চাপ / ব্লাড প্রেসার কমে যাবে।
শরীরের অভ্যন্তরে অনেক অঙ্গে তরল পদার্থ জমে যেতে পারে (চিকিৎসক ছাড়া এই বিষয় সাধারণ জনগনের বোধগম্য হবেনা)।
সব চেয়ে ভীতিকর উপসর্গ হবে রক্তপাত। অল্প বা বেশি যে কোন পরিমান রক্তপাত হতে পারে যেমন দাঁত ব্রাশ করতে গেলে, বমির সাথে, পেশাব পায়খানার সাথে রক্ত পাত। তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর চূড়ান্ত ভাবে নিশ্চিত করা
রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বর সনাক্ত করা যাবে। রক্তের সিবিসি (CBC) পরীক্ষায় দেখা যাবে শ্বেত রক্তকনিকা এবং অণুচক্রিকার পরিমান কমে যাবে।
Dengue NS1 antigen পরীক্ষা করে জ্বরের প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু সনাক্ত করা যায়। তবে মাঝে মাঝে জ্বর শুরুর ২৪-৪৮ ঘণ্টায় Dengue NS1 antigen এর ফলাফল সঠিক নাও হতে পারে।
তাই জ্বর আসার ২ দিন পরেই Dengue NS1 antigen পরীক্ষা করা বেশি কার্যকরী। যদি ৫-৬ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় তবে এন্টিবডি টাইটার নির্ণয় করে ডেঙ্গু সনাক্ত করা যায়।
ফলাফল যদি স্বাভাবিক থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায় তবেই ডেঙ্গু বলা যাবে। তাছাড়া PCR পদ্ধতিতে ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্ত করা যায়।
ডেঙ্গু হলে করণীয় ও চিকিৎসা
ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু
সবার আগে মনে রাখতে হবে কোন মতে Aspirin খাওয়া যাবেনা।প্রচুর পরিমাণে পানীয় খাওয়াতে হবে। ডেঙ্গুর চিকিৎসায় তরল খাবারের কোন বিকল্প নাই। খাবার পানি, ফলের রস, ডাবের পানি, লবন চিনির সরবত এবং খাবার স্যালাইন।
জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল মুখে খেতে দেয়া যাবে। যদি জ্বর খুব বেশি হয় তবে পায়ু পথে প্যারাসিটামল দিতে হবে।অ্যান্টিভাইরাল বা Steroid এর কোন পরীক্ষিত ভূমিকা নাই।
হেমরেজিক ডেঙ্গু
যদি হেমরেজিক ডেঙ্গু হয় , যদি রক্তপাত বেশি হয়, বা Dengue shock syndrome হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
Dengue shock syndrome এ অবশ্যই হসপিটাল নিতে হবে, প্রয়োজনে রক্ত দিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা কম না। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ
Aedes স্রোতহীন শান্ত পানিতে বসবাস করে, বংশ বিস্তার করে।বাড়ির আশেপাশে যেখানে পানি জমতে পারে এমন জায়গা পরিষ্কার রাখুন, পানি জমতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
পানির পাত্র, ফুলের টব, ডাবের খোসা, পুরানো টায়ার ইত্যাদি জায়গায় যাতে পানি জমতে না পারে।
মনে রাখবেন ডেঙ্গু দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই মশারী ডেঙ্গু প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।