:: তাহসিন আহমেদ ::
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর সিদ্দিকের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী পার হয়েছে । ২০১০ সালের ৩ ফেব্রয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সেই সময়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়ে ২ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের তৎকালীন হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান মোল্লা গ্রুপের সংঘর্ষের সময় তিনি আহত হন। মৃত্যুর দু’ মাস পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকরের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ৪র্থ সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৭৫ পেয়েছিলেন। চতুর্থ সেমিস্টারের ফল বের হওয়ার আগে তিনি খুন হন। তাঁর বিভাগে সেই সময়ে এর চেয়ে ভালো জিপিএ কারো ছিল না। আবু বকর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় গ্রামে গিয়ে কৃষিখেতে কাজ করতেন, প্রতিবেশীদের বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন। তাঁর বাবা রুস্তম আলী দিনমজুর। মা রাবেয়া খাতুন তিন বছর মাথায় তেল না দিয়ে সেই টাকা ছেলের পড়ার খরচ চালানোর জন্য সঞ্চয় করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যায়।
এই হত্যাকাণ্ডের ১ মাস পর ২০১০ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রো-ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি একটি রিপোর্ট দিলেও সেখানে হত্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। দীর্ঘ ১৪ মাস কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে ছাত্রলীগের এফ রহমান হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুকসহ আট নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযুক্ত অন্য আসামিরা ছিলেন- এনামুল হক, মনসুর আহমেদ রনি, আবু জাফর মো. সালাম, মফিদুল ইসলাম খান, রকিব উদ্দিন, মেহেদী হাসান ও তৌহিদুল খান তুষার। ঘটনার পরপরই আসামিদের মধ্যে দু’জন ফারুক ও রকিবকে গ্রেফতার করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ১০ ছাত্রকে নামমাত্র সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি আবু বকর হত্যা মামলার আসামিরা খালাস পায়। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হলেন হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক, মফিদুল আলম খান (তপু), রকিব উদ্দিন (রফিক), মনসুর আহমেদ (রনি), আসাদুজ্জামান (জনি), আলম-ই-জুলহাস, তৌহিদুল ইসলাম খান (তুষার), আবু জাফর মো. সালাম, এনামুল হক (এরশাদ) ও মেহেদী হাসান (লিয়ন)। এঁরা সবাই ঘটনার সময় এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
এই হত্যার ব্যাপারে মামলার প্রধান আসামি সাইদুজ্জামান ফারুকের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ জানেন আবু বকরকে কে বা কারা খুন করেছে।’
অর্থাৎ, কুমিল্লার তনুর মতই আবু বকর নিজেই নিজেকে হত্যা করেছে।
উল্লেখ্য, মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ।
আবু বকর বেঁচে থাকলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে বিএসএস পাশ করতো ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। হয়ত হতে পারতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিচারহীনতার নষ্ট সংস্কৃতি আবু বকর হত্যার বিচার নিশ্চিত না করে উল্টা তাঁর দিনমজুরবাবা রুস্তম আলী এবং মা রাবেয়া খাতুনের আমৃত্যু দীর্ঘশ্বাসের কারণ হয়ে থাকল।
মরহুম আবু বকরের বেদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
পুনশ্চঃ আবু বকর হত্যা মামলায় খালাস পাও্য়া একজন আসামি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছেন।
আবু বকর হত্যার বিচার না হওয়াটা দুঃখজনক