:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ১৫ বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন শেষে আজ দেশে ফিরেই গ্রেফতার হয়েছেন। আগের একটি মামলায় দণ্ডিত হওয়া তাঁকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আদালতে নেওয়ার কথা রয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে থাকসিনকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের ফুটবল দল ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক মালিক থাকসিনকে আদালতে নেওয়ার সময় সড়কের ২ পাশে সমবেত হন লাল শার্ট পরিহিত ভক্তরা।
আদালতে তাকে ৩টি অভিযোগে ৮ বছরের কারাদণ্ড ভোগের আদেশ দেওয়া হয়। থাকসিনের অনুপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে সাবেক শিন কর্প প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট মামলা এবং ১টি ব্যাংক ঋণ ও ১টি লটারির মামলার বিচারের রায়ে এই শাস্তি দেওয়া হয়।
ফেউ থাই দলের নেতৃত্বে গঠিত জোটের নেতা হিসেবে আজ স্রেথা থাভিসিনের থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হওয়ার কথা। স্রেথা থাভিসিন দেশটির একজন প্রথম সারির ব্যবসায়ী। উল্লেখ্য, থাই ফেউ দল হচ্ছে থাকসিনের রাজনৈতিক দলের বর্তমান সংস্করণ।
মঙ্গলবার সকালে সিঙ্গাপুর থেকে নিজস্ব বিমানে ব্যাংকক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এ সময় তাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হন শত শত সমর্থক। আর তার দেশে ফেরার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগের স্বেচ্ছা নির্বাসনের অবসান হলো।
একটি ব্যক্তিগত জেট বিমানে করে ধনকুবের থাকসিন স্থানীয় সময় সকাল ৯ টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা) ব্যাংককের ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। গান গেয়ে, উল্লাস প্রকাশ করে ও ঐতিহ্যবাহী ‘লাল শার্ট’ পরে তাকে স্বাগত জানান বিমানবন্দরে আগত শত শত ভক্ত ও সমর্থক।
বিমান থেকে বেরিয়ে তিন সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে টার্মিনাল ভবনের দিকে এগিয়ে যান থাকসিন। পরে টার্মিনাল ভবনের পাশে স্থাপিত থাই রাজার প্রতিকৃতির সামনে গিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে টার্মিনালের বাইরে উপস্থিত হাজারো মানুষের উদ্দেশ্যে প্রথমে হাত জোড় করে এবং পরে এক হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।
এদিকে, থাইল্যান্ডের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দর থেকে সোজা থাই সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তাঁর ওপর আরোপিত দণ্ডের বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি। তাই কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে বলতে পারছেন না, থাকসিন কি জেলে যাবেন নাকি আইনি প্রক্রিয়ায় জেলের বাইরে থাকবেন।
এর আগে, এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হন ৭৪ বছর বয়সী রাজনৈতিক নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তিনি দেশের বাইরে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। অবশ্য মাঝে একবার ২০০৮ সালে তিনি থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে থাকসিনের অনুপস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে চারটি মামলায় ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তার দল ক্ষমতায় আসার মুহূর্তে থাকসিনের দেশে প্রত্যাবর্তনে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, তার শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার বা স্থগিত রাখার কোন একটি ‘পেছনের দরজার চুক্তি’ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন থাকসিন। তিনি আধুনিক যুগে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং একই সঙ্গে সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনীতিক।
পল্লী অঞ্চলে তিনি সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যুনতম বেতন সুবিধা চালুর জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। অপরদিকে, সামরিক বাহিনী ও রাজার প্রতি অনুগত জনগোষ্ঠী তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত, কতৃত্বপরায়ণ ও থাই সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখে।
২০০১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত থাইল্যান্ডের সব নির্বাচনে থাকসিনের দল বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলগুলো আধিপত্য বিস্তার করেছে।