:: শহীদুল ইসলাম বাবুল ::
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখনো এই সংকট অতিক্রম করতে পারে নাই। এটাকে আমাদের ব্যর্থতাও বলতেও পারেন। বা এভাবেও বলা যায়, সময় ও পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত আমাদের সফল হতে দেয়নি।
কিন্তু পারিনি বলে যে পারবো না- তা নয়। সংগত কারনেই আমাদের মধ্যে বিভেদ, বিভ্রান্তি ও কারও কারও মধ্যে হতাশা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ইংরেজিতে একটি বহুল প্রচারিত প্রবাদ আছে- ‘Success has many fathers, failure is an orphan’.
অবশ্যই সফলতার অংশীদার অনেক, কিন্তু ব্যর্থতার দায় যে কেউ নিতে চাইবে না-তা তো
সত্য। কিন্তু একটু গভীরভাবে যদি চিন্তা করেন- তাহলে নিশ্চয়ই বুঝবেন, সময় এখন কতটা
বৈরী। আমাদের তো অনেক সফলতার ইতিহাস আছে। সেই অভিযাত্রার অনেক সিপাহসালার এখনও
আমাদের নেতৃত্বে আছেন-বাট কেউই আলাদা দ্যুতি ছড়াতে পারছেন না। পারছেন না যে, তারও
অনেকগুলো কারণ আছে। তার মধ্যে নিচের কারণগুলো অন্যতম।
এক।
অবশ্যই আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা। বিগত দুইটি আন্দোলনের পরে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্থ দলকে পুনর্গঠন বা নার্সিংয়ে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় নাই- যেই প্রক্রিয়া কেবলমাত্র শুরু হয়েছে। সর্বব্যাপী আরও দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ করা দরকার।
দুই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের সর্বশেষ রাজনৈতিক চরিত্রটুকু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে দেশবিরোধী মূর্তিমান আতঙ্ক ও ফ্যাসিবাদী রূপে আত্মপ্রকাশ করা।
তিন।
আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠা ও আমাদের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ।
চার।
বৈশ্বিক উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির বিস্তার এবং অহেতুক বিএনপি ও বাংলাদেশকে তার টার্গেটে পরিনত করা। গনতন্ত্র ও মানবাধিকারের পরিবর্তে বিশ্ববানিজ্যে অগ্রাধিকার।
পাঁচ।
নেতৃত্বের ব্যর্থতা- সঙ্গত কারনেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে,তার বিকল্প হিসেবে দেশের মধ্যে বিদ্যমান নেতৃত্বে সুপারম্যান বা অতিমানবীয় গুনাবলী বা ক্যারিশমা নিয়ে কেউ উঠে আসেন নাই। আবার সকল নেতৃত্বই যে খুব ব্যর্থ বা অকার্যকর- সেকথা বললেও খুব অবিচার করা হবে।
একটি কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, রাজনীতি হলো ধৈর্যের খেলা। এখানে শর্টকার্ট কোন পথ খুঁজতে নেই। অযথা আবেগ বা অস্থিরতারও কোন সুযোগ নেই। এই সরকারকে উল্টে ফেলে দিতে পারি নাই বলেই যে আমাদের সব শেষ হয়ে গিয়েছে এমন নয়। উল্লেখ করবার মত অনেক সফলতা আমাদের আছে।
সব চাইতে বড় সফলতা হলো, আমাদের এমন একজন নেত্রী আছেন যার উচ্চতা আকাশসম। শত জুলুম, নিপীড়নে ও মৃত্যু দশায় উপনীত হয়েও যিনি মাথা নত করেন নাই। এ কারনেই তিনি সবার থেকে আলাদা ,অনন্য।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই মুহূর্তে বিএনপি ইতিহাসের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। নিরপেক্ষ কোন নির্বাচন হলে নিশ্চিতভাবেই তা প্রমান হবে। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগের মত পুরাতন রাজনৈতিক দল সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বন্দুক, কামান, মারণাস্ত্র আর তাদের প্রভু দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
দীর্ঘ এক যুগের বেশি সীমাহীন দমন, পীড়ন, ষড়যন্ত্র ও লোভ লালসার পরেও দলটি এখনও অভিন্ন ও ঐক্যবদ্ধ আছে। বিপুল জনসমর্থন ও কর্মীবাহিনী নিয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আর এইভাবে দাঁড়িয়ে যে আছে,এইটাই হলো আওয়ামীলীগের মাথাব্যাথার কারন। আমরা না বুঝলেও শেখ হাসিনা ঠিকই বুঝে। জোর করে ওরা ক্ষমতায় আছে ঠিকই, কিন্তু ওদের রাতের ঘুম হারাম। ঘুমালেও স্বপ্ন দেখে চমকে দেখে এই বুঝি খালেদা জিয়া, বিএনপি, তারেক রহমান আসলো।
কিন্তু আমরা বড়ই অস্থির। আওয়ামীলীগ শত চেষ্টা করেও বিএনপি ভাঙতে পারে নাই,পারবেও না। কিন্তু আমরা অনলাইন এক্টিভিস্টরা বরং ওদের সেই অসমাপ্ত কাজেই সহযোগিতা করছি। তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নের ক্রীড়নক হচ্ছি। কে সফল, কে ব্যর্থ- তা হিসাব করবার সময় এখন নয়। নেতৃত্বের ব্যর্থতা থাকতে পারে, বাট যাই হোক- এই মুহূর্তে হঠাৎ ম্যাজিক্যাল পরিবর্তন আশা করা দুরূহ। নেতারা ব্যর্থ হলে কর্মীরা কি সফল ? নিশ্চয়ই না। তবে সবাই আমরা এক সাথেই সফল হবো। দ্রুত সফল হবো, কিংবা একটু দেরিতে হলেও হবো। সেইজন্য একটু ধৈর্য্য ধরুন, ঐক্যবদ্ধ হোন, সচেতন হোন । দিনশেষে আমরাই বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ বিএনপির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক
গণতন্ত্রের জয় হোক