:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
দিনাজপুর সীমান্তে স্কুলছাত্রকে হত্যা করলো বিএসএফ। দিনাজপুর সদর উপজেলায় ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি স্কুলছাত্র মিনারুল মারা যান।
নিহত মিনারুল ইসলাম (১৬) একই ইউনিয়নের খানপুর ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে খানপুর উচ্চবিদ্যালয়েরে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি রংমিস্ত্রির জোগালির কাজ করত মিনারুল। চার ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার দাইনুর সীমান্তের ৩১৫ মেইন পিলার ও সাবপিলারের ৩১৪-৮ ভারতীয় হরিওলপুর তেলিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের দাইনুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল রাতে সীমান্তে গোলাগুলির খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় লোকজন সীমান্তের ৩১৪/সি এস পিলারের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে তেলিয়াপাড়া এলাকায় ভারতীয় আবাদি জমির ওপর মিনারুলের লাশ দেখতে পান। এ ঘটনায় কমলপুর ইউনিয়নের খানপুর এলাকার এমদাদুল (২৮) ও সাগর (২০) নামের দুই তরুণ নিখোঁজ আছে বলে দাবি করেছে তাঁদের পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনারুলসহ সাত-আটজন তরুণ গতকাল রাতে দাইনুর সীমান্ত এলাকায় গিয়েছিলেন। রাত ১০টার দিকে গুলি ছোড়ার শব্দ পান স্থানীয় লোকজন। সকালে ভারতীয় স্বজনদের কাছে সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারেন এপারের বাসিন্দারা।
দিনাজপুর সদরের কমলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘সীমান্তের ওপারে ভারত এলাকায় বসবাসকারী আমাদের আত্মীয়ের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে জানতে পারি গত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে তাঁরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায়। পরে তাঁরা আমাদের বলেন, ‘‘সীমান্তে আমরা গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি। সম্ভবত কেউ মারা গেছে, তোমরা খবর নাও।’
নিহতের মা মিনারা পারভিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি রংমিস্ত্রি কাজ করত। গতকাল বিকেলে বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া শেষে তারা ফোনে একটা কল আসলে সে রং করার কাপড় পড়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, রঙের কাজ আছে আসতে রাত ৮ /৯টা বাজবে। রাত ৯টার পরে তাকে ফোন দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাতে আর কোনো খোঁজ-খবর পাইনি। আজ সকালে মারা যাওয়ার খবর পাই।’
এদিকে মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়ে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা শেষে আমাদের জানালে আমরা গিয়ে মরদেহ গ্রহণ করব।’
বিএসএফের কাছে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। মরদেহ ভারতের গঙ্গারামপুর থানায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিজিবির মাধ্যমে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।’
দাইনুর বিজিবি বিওপির নায়েক সুবেদার আকতার হোসেন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বিএসএফের গুলিতে ওই কিশোর নিহত হয়েছে। এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে পতাকা বৈঠক হবে না। মরদেহ ভারতের গঙ্গারামপুর থানায় নেওয়া হচ্ছে। সেখানে ময়নাতদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিজিবির উপস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে লাশ হস্তান্তর করবে ভারতীয় পুলিশ।
এর আগে গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি নয়াদিল্লিতে বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই শীর্ষ নেতা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর একদিনের মধ্যেই সীমান্তে হত্যার ঘটনা ঘটলো।