ভাঙ্গনের সুর
– ধ্রুপদী শামীম টিটু
প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাকে দরজা বন্ধ করতে হয়,
নিজেকে বঞ্চিত করতে, বিভাজিত করতে, যুগলভাবে!
প্রতিটি দরজা এক একটি প্রাচীর যা টপকানো যায় না,
প্রতিবার দরজা খুলে বেড়োতে হয়।
মানব মন এক দৃশ্যমান দেয়াল, অদৃশ্য প্রাচীর
যার ভেতর দিয়ে যেতে হয়; না খুলে, না টপকে!
একদিন প্রত্যুষে মুখোমুখি বাবা-মা!
মা আমাকে নিয়ে দরজা থেকে বের হয়ে এলেন, বাবার মুখের ওপর সশব্দে দরজা বন্ধ করে। আমি মায়ের কোলে মাথা গুজেছি, পৃথিবীর জঞ্জাল থেকে বাঁচতে। সেই দরজা আর কখনো খোলেনি।
মেঘের সঙ্গী হয় আকাশ, সেখানেই সব সুখ-দুঃখ। আমাদেরও সঙ্গী হয়েছিল আকাশ, তবে হাসতো না, অঝোরে কাঁদতো। ফুল, পাখি, ঋতুবদল সব হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। দিনের আলোতে আমাদের জীবন ছিল ঠিক পেঁচার মতোন।
প্রায় রাতেই আমাদের পেটে ডেকে উঠতো বিড়ালছানা, ছিন্নভিন্ন করতো সুতীক্ষ্ম নখরে!
অবশেষে পথে ঘুরে ঘুরে মেষ চড়ানো মাঠে সবুজ উদ্ভিদ দিয়েছে জীবনের পাঠ। জীবনের প্রয়োজনেই কাউকে হতে হয় ঘাস, মেষ, বৃক্ষ, নদী, মনিব কিংবা কৃতদাস।
তবু এখনো গভীর রাতে কানে বাজে, বাবার মুখের উপরে বন্ধ হয়ে যাওয়া সশব্দ আওয়াজ! একই পৃথিবীতে একই আসমান তলে, আমরা যা রুখতে পারি না তা হলো ভাঙন।
রংপুর, ২৫ আগস্ট ২০২০