:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শপথ নিয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে শপথ পড়ান।
এর আগে শপথ নিতে সকাল ১১টার আগে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন নতুন প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা, মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, জাতীয় সংসদের উপনেতা, সাবেক প্রধান বিচারপতিগণ, আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারপতি, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীসহ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন।
এদিকে ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মেয়াদ গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর শেষ হয়েছে। শপথনামায় স্বাক্ষরের পরপরই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের পর থেকে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ছোট ভাই সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার বাবা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ আওয়ামী লীগ মনোনীত পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল গঠনের পর জাতীয় ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যসব ছাত্র সংগঠন বিলুপ্ত করা হয়। আর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সেই জাতীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদ প্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত দুই নম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং একই বছরের ১৩ ডিসেম্বর এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ওবায়দুল হাসান ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ: একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দু’টি গ্রন্থ রচনা করেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।