:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
চলতি বছরের জুন মাস শেষে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
চতুর্থ প্রজন্মরে ব্যাংকগুলো ৯ বছরেরও অনিয়ম-দুর্নীতি আর বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারি থেকে বের হতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনায় নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিজেদের ইচ্ছামতো চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। দিনদিন বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা ব্যাংকপাড়ায় বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তাই এখনই এসব ব্যাংকের জন্য কঠোর অবস্থানে যেতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
২০১৩ সালে ৯টি নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে দেশীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানায় ছয়টি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মালিকানায় অনুমোদন পায় তিনটি ব্যাংক।
দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- মধুমতি, মিডল্যান্ড, ইউনিয়ন, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স, মেঘনা ও পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)। আর প্রবাসীদের মালিকানায় অনুমোদন পায় এনআরবি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড) ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। যা তিন মাস আগে ছিল ৫ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অথাঁৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। তিন মাসে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির হার ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এর মধ্যে মধুমতি ব্যাংকের চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে ১৮০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ৫৮ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১২২ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ খেলাপি।
মিডল্যাণ্ড ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি বেড়ে ১৬২ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। তিন মাস আগে ব্যাংকের খেলাপি ছিল ৫৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১০৫ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ খেলাপি।
ইউনিয়ন ব্যাংকের বর্তমান খেলাপির পরিমাণ ৭১২ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ছিল ৩৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এছাড়া সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের বর্তমান খেলাপি ৪১৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে এ ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ২৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকটির বর্তমান খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
চলতি বছরের জুন শেষে মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২৪১ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ২১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২৪ কোটি টাকা। বর্তমান ব্যাংকটির বিতরণকৃত মোট ঋণের ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকের জুন শেষে খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে এনআরবি ব্যাংকের মোট খেলাপির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২১৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১০১ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ খেলাপি।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৩২৯ কোটি টাকা। তিন মাসে আগে ব্যাংকটির খেলাপি ছিল ১৭৩ কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ৬০০ কোটি টাকা। তিন মাসে খেলাপি ছিল ১৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪১৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে দেশে বিতরণ করা মোট ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।