হিন্দু সন্ন্যাসী প্রহ্লাদ জানি ওরফে মাতাজির (Prahlad Jani Mataji) দাবি, তিনি বিগত ৭৭ বছর ধরে পানি বা খাবার কিছুই মুখে তোলেননি। তবুও মৃত্যু দূরস্থান, দুর্বলতা পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারেনি তাকে।
১৯২৯ সালে গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন প্রহ্লাদ জানি মাতাজি। মাত্র সাত বছর বয়সেই আধ্যাত্মিক অনুসন্ধিৎসার তাগিদে নিজেদের রাজস্থানের বাড়ি ছেড়ে প্রহ্লাদ জঙ্গলে গিয়ে থাকতে শুরু করেন।
প্রহ্লাদের বক্তব্য, মাত্র ১১ বছর বয়সেই দেবী অম্বার কৃপা লাভ করেন তিনি। তারপরে অম্বার মতোই লাল শাড়ি আর অলংকারে নিজেকে সজ্জিত করেন তিনি। দেবী অম্বাই নাকি প্রহ্লাদকে পানি ও খাদ্য ছাড়া জীবিত থাকার শক্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রহ্লাদের বিশ্বাস, স্বয়ং দেবীই তার শিরস্থ ব্রহ্মরন্ধ্র দ্বারা এমন কিছু দ্রবণ তার শরীরে প্রবিষ্ট করিয়ে দেন যে অন্য কোনো পানীয় বা খাদ্যের প্রয়োজনই হয় না তার। বর্তমানে প্রহ্লাদ গুজরাটের অম্বাজি মন্দিরের কাছে একটি জঙ্গলের অভ্যন্তরে একটি গুহার মধ্যে বসবাস করেন। রোজ ভোর ৪টার সময় ঘুম থেকে উঠে পড়েন তিনি, এবং দিনের বেশিরভাগ সময়টা ধ্যানের মাধ্যমে কাটান।
ডাক্তার সুধীর শাহের নেতৃত্বে ডিফেন্স ইন্সটিটিউট অফ ফিজিওলজি অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেস এবং অন্যান্য ডাক্তারি সংস্থার সদস্যরা ২০১০ সালে একটি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রহ্লাদের না খেয়ে বেঁচে থাকার রহস্যভেদ করার চেষ্টা করেন। আহমেদাবাদের স্টারলিং হাসপাতালের একটি ঘরে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণের সামনে প্রহ্লাদকে রাখা হয় ১৫ দিন। সেই ১৫ দিন নাকি প্রহ্লাদ কিছুই খাননি বা পান করেননি। এমনকী টয়লেটেও জাননি। সেই অবস্থায় প্রহ্লাদের শরীরে নানা ডাক্তারি পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, তার শরীরী অবস্থা একেবারে স্বাভাবিক রয়েছে। এইসব দেখে ডাক্তাররা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছন যে, নিয়মিত ধ্যান এবং যোগাভ্যাসের ফলে সম্পূর্ণ খাদ্য ও পানিহীন অবস্থাতেও সুস্থ থাকার কোনো একটি কৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছে প্রহ্লাদের শরীর। এহেন ক্ষমতা মানবসমাজে একেবারে তুলনারহিত বলে ব্যাখ্যা করেন ডাক্তাররা।
হার্ভার্ড হিউম্যানিটারিয়ান ইনিশিয়েটিভ-এর ডাক্তার মাইকেল ভ্যান রুয়েন বলছেন, পৃথিবীর কোনো মানুষের পক্ষেই একটানা ২০ দিনের বেশি পানি না খেয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সুধীর শাহদের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে তার বক্তব্য, পরীক্ষার সময় তোলা সিসিটিভি ফুটেজ যথেষ্ট নয়, কারণ তাতে ১৫ দিনের ২৪ ঘণ্টার ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন প্রহ্লাদ তার ভক্তদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই ভক্তদের কেউ যে তাকে গোপনে কোনো খাদ্য বা পানীয় সরবরাহ করেননি, এবং তা যে প্রহ্লাদ সেবন করেননি, তার প্রমাণ কী!
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা একেবারে অসম্ভবও বটে। কিন্তু যুক্তি যেখানে স্তব্ধ হয়ে যায়, সেখান থেকেই তো শুরু হয় ভক্তির সাম্রাজ্য। এই ৮৮ বছর বয়সেও তাই ভক্তদের কাছে আধ্যাত্মিকতার পরাকাষ্ঠা রূপে পূজিত হন প্রহ্লাদ জানি ওরফে মাতাজি।