:: মারিয়ানা প্রাপ্তি ::
দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো নিজেকে নিজে ভালোবাসতে না পারা। আমরা সবসময় এটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি কারা আমাদের ভালোবাসে, কারা আমাদের নিয়ে ভাবনায় মত্ত থাকে, কেউ আমাদের যত্ন করে কিনা এসব নিয়ে। আমরা হৃদপিন্ডকে বুকের বামপাশে রেখে নিজের হৃদয়ের দায়িত্ব দিয়ে বসি অন্যকে। কেন? যেখানে দিনশেষে আমরা সবাই একা, কেন আমরা এতো যত্ন করি অন্য কেউ আমাদের বুঝতে পারল কি না পারল, গুরুত্ব দিল কি না দিল এসব ভেবে? জীবন একটাই! এই জীবনে যদি নিজের হৃদয়টাকে নিজেই সযতনে না রাখতে পারলাম, নিজেকে ভালো নাই বাসতে পারলাম তবে এ জীবনের মূল্য কী?
এখন হয়ত যার কথা ভেবে চোখের পানি ফেলছি তার হয়ত সময়ই নেই আমাকে নিয়ে ভাবার, আমাকে বোঝার। অন্যের অবহেলা নিয়ে বাঁচাটা কি খুব সম্মানের? মোটেও না। অন্যের আশায় না থেকে নিজের যত্ন করাটা নিজেরই শেখা উচিত। একবার নিজেকে ভালোবেসে দেখা যাক না, হয়ত জীবনের মানে বদলে যাবে, সুন্দর হয়ে যাবে অন্যরকম। নিজেকে ভালোবাসতে গিয়ে যদি স্বার্থপরের তকমা লেগে যায় ক্ষতি কী! বেঁচে থেকে যদি আত্মতৃপ্তিই না পাই তবে এত স্বার্থহীন হয়ে কী হবে?
দুনিয়াটা যেমন আপেক্ষিক সম্পর্কগুলোও তেমন আপেক্ষিক, কখন সম্পর্কের রং বদলে যাবে আমরা নিজেরাও জানি না। আমরা নিজেরাই প্রিয় মানুষগুলোর বিতৃষ্ণার কারণ হয়ে গেলে সেটাও আশ্চর্যের কিছু না। অন্যের দেয়া কষ্টগুলোকে বা অবহেলাকে পুঁজি না করে নিজের প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে বাঁচতে শিখলে জীবনটা একটু হলেও সহজ হয়, অন্তত এতে দিনশেষে আমাদের কেঁদেকেটে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমুতে হবে না। যে যেতে চায় তাকে যেতে দেয়াই ভালো। বিধাতা যখন হৃদয় দিয়েছে তখন নিজেকে ভালোবাসার জন্য আর ভালো রাখার জন্য অন্যের হৃদয়ের প্রয়োজন কী, নিজের হৃদয়ই তো যথেষ্ট।নিজের ভালোমন্দ যাচাইয়ের জন্যও তো আল্লাহ আমাদের বিবেক দিয়েছে, সেখানে আমাদের নিয়ে সমালোচকেরা কি বলল তা নিয়ে মন খারাপ করে মাথাব্যথার তো প্রয়োজন নেই। নিজের আবেগ – অনুভূতির ঘুড়ির নাটাই অন্যের হাতে দিলে চলবে না, নিজের হাতেই রাখতে হবে।
দিনশেষে আমরা কেবল আমাদের, নিজের দুঃখ -কষ্ট নিজেদেরই ভোগ করতে হয়, একাকীত্বের সঙ্গী আমরা নিজেরাই। তাই নিজের হৃদপিন্ডের চেম্বার গুলোতে অন্যদের জায়গা দেয়ার আগে অন্তত নিজের জন্য পরিমিত জায়গাটুকু রেখে দেয়া উচিত।
Be your own guide in your life.