এখানে সবাই বিশ্ব নাগরিক। চাইলে যে কেউ-ই, এমনকী আপনিও এই দেশের নাগরিক হতে আবেদন করতে পারেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণের কোনো বিধিনিষেধ নেই। লাগে না পাসপোর্ট বা ভিসাও। দেশটির নাম এনক্লেভা, রাজধানীর নামও তাই। প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় দাবিদারহীন এক টুকরো জমিতে এই দেশটি প্রতিষ্ঠা করেছেন একদল পর্যটক।
স্লোভেনিয়ার রাজধানী জাগরেব থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে ছিমছাম গ্রাম মেটলিকি। ঘুরতে ঘুরতে সেই গ্রামে গিয়ে ওঠেন পোলিশ পর্যটক কামিল ভরোনা আর তার বন্ধুরা। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে কামিলরা জানতে পারেন, দানিয়ুব নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট্ট এক টুকরো জমি এখনও খালি পড়ে আছে। স্লোভেনিয়া বা ক্রোয়েশিয়া কোনো দেশই এই জমির মালিকানা দাবি করেনি। তখনই কামিলদের মাথায় খেলে যায় নয়া পরিকল্পনা। সেই মতোই এ বছর ২৩ এপ্রিল কামিলরা গড়ে তোলেন ‘মাইক্রোনেশন’ বা ‘ক্ষুদ্র দেশ’। নাম রাখেন কিংডম অফ এনক্লেভা (The Kingdom of Enclava), সংক্ষেপে ‘এনক্লেভা’ (Enclava), বলতে পারেন আমাদের ছিটমহলের মতোই।
এর পরই হঠাৎ ক্রোয়েশিয়ার ঘুম ভাঙে। ২১ মে ক্রোয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ওই এলাকাটি তাদের দেশের মধ্যে পড়েছে। এর মালিকানা স্পষ্ট করতে প্রয়োজনে সালিশি আদালতে যাবে তারা।’ এর দু-দিন পর পালটা বিবৃতিতে ছিটমহলের লোকজন জানান, ছিটমহলবাসী অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ওই এলাকা ছেড়ে তারা সরে যাবেন। তাই নতুন এই দেশটি আর একটু সরে আস্তানা গাড়ে দানিয়ুব নদীর ধারে দাবিহীন আর এক ভূখণ্ডে। নতুন এই ভূখণ্ডের আয়তন মাত্র ১ হাজার বর্গমিটার। ছিটমহলের বাসিন্দারা সেখানে ইতিমধ্যে সরকার গঠন করেছে। সরকার ব্যবস্থার ধরন রাজতন্ত্র। বর্তমান রাজা এনক্লেভ দ্য ফার্স্ট। প্রধানমন্ত্রী লেডি অ্যানেমারিজিন তামিঙ্গা। রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি, পোলিশ, স্লোভেনীয়, ক্রোয়েশীয় ও চীনা।
সারা দুনিয়ায় কিংডম অফ এনক্লেভ বা ফ্রি রিপাবলিক অফ লিবারল্যান্ডের মতো আরও অনেক ক্ষুদ্র দেশ রয়েছে। পূর্ব ইউরোপের এই অঞ্চলেই আছে ভূরি ভূরি উদাহরণ। ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে জন্ম হয় নতুন সাতটি রাষ্ট্রের। কিন্তু সাত রাষ্ট্রের প্রায় সবার সঙ্গেই সবার সীমান্ত বিরোধ প্রবল। এরই একটিতে গড়ে উঠেছে এনক্লেভা বা ছিটমহল।
নয়া এই দেশটির কোনো আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক স্বীকৃতি নেই। এ ধরনের দেশের ক্ষেত্রে তা থাকেও না। অতীতে এমন ক্ষুদ্র দেশের জন্ম হয়ে, সময়ের স্রোতে তা হারিয়েও গিয়েছে। তো কী, জন্মমুহূর্তে এতটা নিরাশ হওয়ার মানে হয় না।