:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
চলতি বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন-যুক্তরাষ্ট্রের পিয়েরে অগস্তিনি (Pierre Agostini), জার্মানির ফেরেন্স ক্রাউস (Ferenc Krausz) এবং সুইডেনের অ্যানে হুইলিয়ে (Anne L’Huillier)।
পদার্থের ইলেক্ট্রন গতিবিদ্যায় বিশেষ অবদান রাখায় তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টায় সুইডেনের স্টকহোমে রয়্যাল সুইডিস একাডেমি বিজয়ী হিসেবে তাদের নাম ঘোষণা করে।
এই বিজ্ঞানীরা আলোর অতি সংক্ষিপ্ত স্পন্দন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন, যেটির মাধ্যমে অণু–পরমাণুর ভেতরের উপদানের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এটি উন্নততর পদ্ধতিতে রোগ শনাক্ত ও আরও উন্নত ইলেকট্রনিক্স উদ্ভাবনে সহায়ক হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইলেকট্রন গতিবিদ্যায় পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে কীভাবে আলোর অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরি হয়, তাদের গবেষণায় সেটি দেখানো হয়েছে।
নোবেলজয়ী এ তিন পদার্থবিদ এমন আলোর ফ্ল্যাশ (ঝলকানি) তৈরি করেছেন যেগুলো ‘অতি দ্রুত চলাচলকারী’ ইলেকট্রনের স্ন্যাপশট নিতে পারে।
এর আগে ২০২২ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জিতেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন অ্যালাইন আসপেক্ট, জন এফ ক্লসার ও আন্তন জেলিঙ্গার। ইনট্যাঙ্গলড ফোটনস, ভায়োলেশন অব বেল ইনইকুয়ালিটিস প্রতিষ্ঠা এবং কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁদের আবিষ্কার কোয়ান্টাম ইনফরমেশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। তিনজনের মধ্যে বিজ্ঞানী অ্যালাইন আসপেক্ট ফরাসি, জন এফ ক্লসার মার্কিন এবং আন্তন জেলিঙ্গার অস্ট্রিয়ার নাগরিক।
গতকাল চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এবার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ক্যাটালিন ক্যারিকো (Katalin Karikó) ও ড্রু ওয়েইসম্যান (Drew Weissman)। । করোনার টিকা তৈরিতে অবদানের জন্য হাঙ্গেরি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী যৌথভাবে এবারের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল জিতে নিয়েছেন। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা।
পুরস্কার হিসেবে তাঁরা দুজনে মিলে মোট ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রাউন বা ৯ লাখ ৮৬ হাজার ডলার ভাগাভাগি করবেন। এর পরিমাণ বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলার সমান ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা) অনুযায়ী প্রায় ১০ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার টাকা।
প্রতি বছর শান্তি, সাহিত্য, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা ও অর্থনীতি- এই ছয় বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন; তাদের পুরস্কার প্রদান করে সুইডেনভিত্তিক নোবেল ফাউন্ডেশন। পুরস্কার প্রদানের পর তা উদযাপনে উৎসবের আয়োজন করে নোবেল কমিটি। নোবেল কমিটির সদর দফতর নরওয়েতে।
উনবিংশ শতাব্দিতে সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল আবিষ্কার করেছিলেন ডিনামাইট নামের ব্যাপক বিধ্বংসী বিস্ফোরক; যা তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পত্তির মালিক করে তোলে। মৃত্যুর আগে তিনি ৩ কোটি ১০ লাখ ক্রোনার রেখে গিয়েছিলেন, আজকের বাজারে যা প্রায় ১৮০ কোটি ক্রোনের সমান। আলফ্রেড নোবেলের উপার্জিত অর্থ দিয়ে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের গোড়াপত্তন ঘটে। ১৯৬৮ সালে এই তালিকায় যুক্ত হয় অর্থনীতি।
প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। প্রথম দিন ঘোষণা করা হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের নোবেল।
ছয়টি বিভাগে ছয় দিন নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়।
আগামীকাল মঙ্গলবার পদার্থে আর বুধবার রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর ৫ অক্টোবর সাহিত্যে আর ৬ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম জানা যাবে। দুই দিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতির নোবেল।
১৯৬৮ সাল থেকে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোবেলের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে অবদানের কথা স্মরণ করে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করে।