মৃত্যু
আমি একদিন মারা যাবো;
প্রাণের পরে জমতে থাকা অপঘাতের
ঘাঁ ঘায়েলে মরতে পারি রোজ দুপুরে;
তবুও জানি মৃত্যু লেখা এক বিকেলে,
আয়েশ মাখা চায়ের নেশা বাকিই রবে সন্ধ্যা রাতের!
মৃত্যু আমায় ডাকছে রোজই পরম স্নেহে;
তোর আঘাতে মরি কিবা বেঁচে থাকি,
তবু মরবো অবিশ্বাসের শহরটাকেও ভালোবেসে।
কেমন করে শ্বাসের সাথে বুকের ঘরে জমছে যে বিষ,
প্লেটের পরে হাসতে থাকা মুক্তো গুলো হেমের আশীষ,
ভালোবেসে তোকে খাওয়া চুমু গুলোও বিষ পাটালি,
আঘাতে কম ভালোবাসায় বুকে বেশি বিষ মাখালি!
এত কথা, আকুলতা, পরমস্নেহ, মায়ায় মাখা জীবনটাতে
মায়ার ভ্রমে একটুখানি ভুলে গেলেই আঘাত আসে ঝড়ের রাতে;
ফি-রোজ চলে শুকনো মাটি ভিজিয়ে ফের পোড়ানো কল,
একটা জীবন আগুন ছ্যাকা, ঝড়ের ঝাপটা উজান বাওয়ার আষাঢ়ে ছল!
একমুহূর্তে উল্টে যাওয়া বালি ঘড়ি উল্টো দোলা’য় দোলায় সবই,
চোখের সামনে বানের তোড়ে ভাসছে সময় ভাসছে দেখো আমার শবই,
বুক ভর্তি নির্লিপ্ততায় দূর থেকে সব দেখছি কেবল
তোর, তোদের আর তাঁর নিজস্ব ধ্বংস লীলা;
খেলবো না আর তোদের গড়া ফাঁপানো আর অর্থপূর্ণ বেলাভূমির বালি খেলা!
আমি একদিন মারা যাবো;
প্রাণের পরে জমতে থাকা অপঘাতের
ঘাঁ ঘায়েলে মরতে পারি রোজ দুপুরে;
তবুও জানি মৃত্যু লেখা অগোচরে।
সন্ধ্যাকালীন নীড়ে ফেরা পাখির ডানার পরে চেপে
মৃত্যু হবে নীড়ে ফেরার ছটফটানি আকুলতার,
মৃত্যু হবে বুকের ভেতর পুষে রাখা বিষাক্ত এক হেমলতার,
মৃত্যু হবে আড়াল করে খুব যতনে পুষে রাখা এক পৃথিবী ভালোবাসার।
************
বুনোফুল
একটুখানি হাসিতে অতটুকু বিষ কিভাবে মাখিস?
একটু খানি কাজলে অতটুকু মেঘ কিভাবে আঁকিস?
একছটাক কটাক্ষে এত কথা কিভাবে বলিস?
এত রাগ নাকে নিয়ে কি মায়াতে শিশির ধরিস?
একটুকু আলো এসে গড়াগড়ি খায় তব চুলে
মন মোর খাবি খায় বার বার যায় পথ ভুলে;
কানে যবে রিনিঝিনি বেজে ওঠে ওই দুটি ঝুমকো
আমি শুনি অপলক বাকি সব হয়ে যায় ঠুনকো!
পাক খেয়ে ও গালেতে সমিরেরা মাখামাখি করে
তোর সব গন্ধেরা নাকে এসে ডাকাডাকি করে,
তারপরও লোভী মন ভরে নাতো রোনাজারি করে
বায়ু হয়ে ঝুলবে সে ফাঁকা তোর ও গলার ‘পরে!
শান্ত ও দেহ জুড়ে চোখ শুধু করে টলটল,
কুচি করে পরা শাড়ি তবু সে কি নিখাদ নিটোল;
এই খানে বসা তুমি তবু যেন হারিয়েছো দূরে
কি নিনাদ যাও গেয়ে কি নিঠুর শান্তিরো সুরে!
হারিয়েছো বুঝি সখা পাওনি কি আপনারে খুঁজে,
দেখবে কি গলা ছেড়ে শব্দেরো ঝংকারে যুঝে?
থাক তবে বাদ দাও যা গিয়েছে চলে যাক তা,
হাত দুটি চাইবোনা মোর সাথে বাড়াও দু পা।
************
অপূর্ণতা
কোন মানুষটা ক্লান্ত ভীষন
কোন প্রানখানা শ্রান্ত;
সূর্য প্রথম ডোবার আগে
রাত কি তা কে জানতো!
পথের শেষে পথিক মনে
কি বীণ বাজে আর কে জানে?
ঝড়ের শেষে শান্ত সাগর
হাহাকারের শব্দ বোনে!
ধ্বংস করার ফাঁদে পড়ে
ঝড় নিজে হয় ধ্বংস;
আকাশ কেঁদে যে রোল তোলে
সেও ঝড়-শ্রাদ্ধের অংশ!
ফণা তুলে ফণী কাটে
বিষথলি তারও ফাটে,
বিষ হারিয়ে ভুজঙ্গমি
নির্বিষে হয় নীল;
অপূর্ণতা বুকের ‘পরে শোর তোলে কিলবিল!
************
অভিশপ্ত বাতাস
মৌসুমি বাতাসে কান পেতে ছিলাম, প্রেয়সীর ডাক শুনবো বলে,
বৃষ্টির ফোটায় বন্দী মনকে চনমনে করবো বলে চাতকের চোখে চেয়ে ছিলাম আকাশ পানে,
অন্ধকার ঘনিয়ে এলো, পূর্ণিমা তার যৌবন হারালো বর্ষন হলো না।
অশীতিপর বৃদ্ধার পঁচা চালের ঘ্রাণ ভেসে এলো প্রেয়সীর ঘ্রাণ এলো না,
ত্রানের লাইনে দাঁড়ানো কিশোরীর আর্তনাদের গর্জন ভেসে এলো বজ্রপাত এলো না,
অভিমানী প্রেমিকার অভিমান দেখবো বলে খুলে দেয়া জানালা জুড়ে
ভেসে উঠলো ক্ষুধা পেটে বড্ড অভিমানে ঝুলে যাওয়া বালিকার আলেয়া;
আমি উটপাখির মতন চোখ মুখ গুঁজে সব ভুলে প্রেয়সীর চেহারা মনে করতে চাইলাম,
অথচ চোখ জুড়ে এক প্যাকেট ত্রানের জন্য রিক্সার পেছনে ছুটতে থাকা অসহায় মা ও তার ছেলে ভেসে এলো।
আমি দু’হাতে চোখ মুখ চেপে ধরতেই ধর্ষিতার রক্তে ভিজে উঠলো মুখ,
আমি কান চেপে ধরতেই ভেসে এলো তার গোঙ্গানি আর আর্তচিৎকার।
বাতাসে পঁচা চালের গন্ধ ভাসছে,বাতাসে বৃদ্ধার অভিশম্পাতের শব্দ ভাসছে,বাতাসে অভিমানি বালিকার ক্ষুধা ভাসছে, বাতাসে
ধর্ষিতার আর্তনাদ মাখা অভিশাপের রক্ত বর্ষণের সমস্ত আয়োজন ভাসছে।
প্রিয়তমা, তোমাকে কল্পনা করার সমস্ত শক্তি কেড়ে নিয়েছে আজ এই ক্ষুধার্ত অভিশপ্ত বাতাস।
************
বাদুড় জীবন
নিঃশব্দের ঢেউএর ঝাঁক যখন বুকের বন্দরে আছড়ে পড়ে,
রাতের মন্দিরে ঝিঁঝিঁপোকার ঝাঁকের ক্রন্দনও তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে না,
আঁধারের কুপি যখন জ্বলে ওঠে, গাঢ় থেকে প্রগাঢ়তর হয়,
শত সহস্র জোনাক তার পুচ্ছ জ্বালিয়ে শেষ চেষ্টা টুকুই কেবল করে যায়।
ঝুল বারান্দায় দাঁড়ানো ঋজু দেহটার ভেতরের আমি বাদুড় ঝোলা ঝোলে,
ভেতরকার আর্তনাদ গুলো অনুরণিত হয়ে ফিরে আসে হাহাকার হয়ে;
জানান দেয় মুক্তির পথ নেই সামনে, উপায় নেই উড়ে যাওয়ার,
সুখ আর দু:খে জুগল বন্দি দোলাটা ফাঁকা দোল খায়,
বাদুড় জীবন তার শিকে ঝুলে থাকে।