আজ ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার ৪৫তম বার্ষিকী। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে মাত্র ১১ মিনিটে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত এক দলীয় সরকার কায়েম করা হয়।
তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর জাতীয় সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল উত্থাপন করেন। ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৬ জন বাদে ২৯৪ জনের সবাই এই বিলের পক্ষে ভোট দেন।
একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এর মাধ্যমে প্রশাসন ব্যবস্থা শেখ মুজিবুর রহমান দেশের নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধিকারী হন।
চতুর্থ সংশোধনী বিল পাসের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার দিনই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অভিনন্দন বার্তার দেন।
বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে বাক, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়। সব কিছুর উর্ধ্বে বঙ্গবন্ধুর আদেশ-নিষেধ আইনে পরিণত হয়।
বাকশালের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সবক’টি সংবাদপত্র বিলুপ্ত করা হয়। শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস—এ চারটি পত্রিকা সাময়িকভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়।
চতুর্থ সংশোধনী বিল পাসের এক মাস পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ (বাকশাল)নামে একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। একইসঙ্গে নিজেকে এই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দল পরিচালনা এবং দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও একক ক্ষমতার অধিকারী হন।
বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে দেশে বৈধ ১৪টি রাজনৈতিক দলের সব কয়টিই বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ দলগুলো হল-
(১) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,
(২) ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর),
(৩) বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি),
(৪) ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী),
.(৫) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল,
(৬) ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টি (ন্যাপ সুধারামী, লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি মোজাফফর ন্যাপের বিদ্রোহী অংশ ও প্রগতিশীল কর্মীগণ),
(৭) জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়ন (বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ও বামপন্থী কর্মীগণ), (৮) বাংলাদেশ জাতীয় লীগ,
(৯) বাংলা জাতীয় লীগ,
(১০) বাংলাদেশ লেবার পার্টি,
(১১) জাতীয় গণতন্ত্রী দল,
(১২) বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস,
(১৩) মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ও
(১৪) শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী।
বিলুপ্ত ১৪টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) মিলে বাকশাল গঠিত হয়।
এর আগে ওই বছর ৭ জুন বাকশালের গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পাঁচটি ফ্রন্ট ও এর কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল পদে প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর নাম ঘোষণা করেন। জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি ও আবদুর রাজ্জাককে দলের সেক্রেটারি করা হয়।
পাঁচ ফ্রন্ট হলো :
১. জাতীয় কৃষক লীগ,
২. জাতীয় শ্রমিক লীগ,
৩. জাতীয় মহিলা লীগ,
৪. জাতীয় যুবলীগ ও
৫. জাতীয় ছাত্রলীগ।
এর সেক্রেটারিরা ছিলেন-ফনী ভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, বেগম সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমদ এবং শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৫ জনকে নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি এবং ১১৫ সদস্য রাখা হয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
___________________
পুনশ্চঃ বাকশালের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ২০২ দিন