:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। বাজেটের শুল্ক, ভ্যাট, কর আরোপের ফলে যেসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে সেগুলো হলো-
আমদানিকৃত সোনার বার
নতুন অর্থবছরে আমদানি করা স্বর্ণের দাম বাড়বে। কারণ ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিদেশে থেকে আসার সময় ব্যাগে স্বর্ণ আনার পরিমাণ ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) থেকে কমিয়ে ১১৭ গ্রাম করা হচ্ছে। আবার ভরিপ্রতি শুল্কের পরিমাণ ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জমি ও ফ্ল্যাটের দাম
রাজউক ও সিডিএ এলাকার আওতাভুক্ত জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের গেইন ট্যাক্স চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আট শতাংশ করা হয়েছে। আর দেশের অন্যান্য এলাকায় এই হার তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে চার শতাংশ করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরে বাড়তে পারে জমি ও ফ্ল্যাটের দাম।
সিগারেট, জর্দা ও গুল
সাধারণত প্রতিটি অর্থবছরের বাজেটে মানুষজনকে নিরুৎসাহিত করতে বাড়ানো হয় তামাকজাতীয় পণ্যের দাম। এবারও তাই হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে জর্দা-গুলের দামও। বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
বাসমতি চাল
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা বাসাবাড়িতে অনেকেরই পছন্দ বিরিয়ানি বা কাচ্চি। এই মুখরোচক খাবারটির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল। তবে দুঃসংবাদ আছে বাসমতি চালে। এবার বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। যার প্রভাবে বাড়বে এই চালের দাম। অর্থাৎ এর ফলে দাম বাড়তে পারে বিরিয়ানি বা কাচ্চির।
কাজুবাদাম
কাজুবাদাম আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ থেকে শুল্ক বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। সুতরাং আমদানি করা কাজুবাদামের দাম বাড়বে। তবে এতে স্থানীয় বাদামচাষিরা উৎসাহিত হবেন।
খেজুর
রমজান মাসে ঘরে ঘরে খেজুরের চাহিদা থাকলেও সারা বছরই কমবেশি চাহিদা থাকে খেজুরের। তবে খেজুর খেতে যারা পছন্দ করেন তাদের এই পণ্য কিনতে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ। বাজেটে তাজা ও শুকনো খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যটির দাম বাড়ার কথা।
সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী
বাড়ি নির্মাণ করতে অনেক মানুষকেই জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্তদের আকাঙ্ক্ষিত বাড়ি নির্মাণে আরও কষ্ট বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া নির্মাণসামগ্রীর (রড, সিমেন্ট, ইট ও বালু) দাম আরও বাড়ছে। আসন্ন বাজেটে প্রতি ব্যাগ সিমেন্টে ২০ টাকা ভ্যাট আরোপ হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্টে স্পেসিফিক ডিউটি রেট প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক আমাদনিকারকদের জন্য স্পেসিফিক ডিউটি রেট প্রতি মেট্রিক টনে ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করা হয়েছে।
দামি গাড়ি
বাজেটে দামি গাড়ির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ হয়েছে। ফলে দামি গাড়ির দাম আরও বেশি বাড়বে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে বর্তমানে সম্পূরক শুল্ক বসে ২০০ শতাংশ, যা ২৫০ শতাংশ করা হয়েছে। আর ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫০০ শতাংশ। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ এবং যানজট ঠেকাতে এই প্রথমবারের মতো একটির বেশি গাড়ি থাকলে পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার।
এলপিজি গ্যাস
তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) তৈরির কাঁচামালে শুল্ক বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাড়বে ভ্যাটও। শুল্ক বিদ্যমান ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। আর ভ্যাট বিদ্যমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।
ভ্রমণ খরচ
আকাশপথে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপানসহ বেশ কিছু দেশে আকাশপথে ভ্রমনে ছয় হাজার টাকা কর দিতে হবে। আকাশপথে সার্কভুক্ত কোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই করের পরিমাণ দুই হাজার টাকা। এ ছাড়া আকাশপথে অন্য কোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কর দিতে হবে চার হাজার টাকা। আকাশপথে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কর দিতে হবে ২০০ টাকা। স্থল ও জলপথে যেকোনো দেশে ভ্রমণের জন্য কর দিতে হবে এক হাজার টাকা। এতে বাড়বে ভ্রমণের খরচ।
অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের গৃহস্থালি পণ্য
প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি টেবিল ও রান্নার পাত্র, টিস্যু পেপারসহ বিভিন্ন পণ্যের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
ফেসওয়াস
বিভিন্ন ধরনের ফেসওয়াস আমদানিতে বিভিন্ন এইচএস কোডে ১২৭ থেকে ১৫৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক নির্ধারিত আছে। বর্তমানে এই শুল্কহার সমন্বয় করে ১৫৭ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বাড়তে পারে আমদানিকৃত বিভিন্ন ফেসওয়াসের দাম।
আমদানিকৃত ফ্রিজ, ফ্যান ও এস্কেলেটর
আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাজেটে এস্কেলেটর তৈরির কাঁচামালের শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকতে পারে। বর্তমানে এর হার ছিল এক শতাংশ। অন্যদিকে লিফটের বাজারে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে বিদেশি লিফট আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
প্যাকেজিং শিল্প
এই ফিল্ম মূলত পানি, বায়ু ও অক্সিজেন প্রতিরোধক হিসেবে প্যাকেজিং শিল্পে ব্যবহার হয়। দেশে পণ্যটি উৎপাদিত হচ্ছে কিন্তু এই পণ্যের আমাদনি পর্যায়ে শুল্ক কম থাকায় বাজারে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষায় নন প্রিন্টেড কাস্ট পলিপ্রোপিলিন ফিল্মের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য পলিমার্স অব প্রোপিলিনের আমদানি শুল্কও ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে খরচ বাড়বে প্যাকেজিং শিল্পে।
মাইক্রোওভেন
মাইক্রোওভেন আমদানিতে বর্তমানে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারিত আছে। কিন্তু বর্তমানে এই হার বাড়িয়ে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই আমদানি করা মাইক্রোওভেনের দাম বাড়বে।
সফটওয়্যার
এইচএস কোড ভেদে আমদানি করা সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারিত আছে। তবে এবারের বাজেটে সব ধরনের সফটওয়্যারের ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে বাড়তে পারে আমদানি করা সফটওয়্যারের দাম।
ইলেকট্রিক সিগারেট
আমদানি করা ইলেকট্রিক সিগারেটে বর্তমানে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, তিন শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি, ১৫ শতাংশ মূসক, পাঁচ শতাংশ আগাম কর ও পাঁচ শতাংশ অগ্রিম আয়করসহ মোট ১৫৩ শতাংশ কর নির্ধারিত আছে। এবারের বাজেটে আমদানি করা ইলেকট্রিক সিগারেটের ওপর সর্বমোট ২১২ দশমিক ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে এর দাম।
আমদানিকৃত বাইসাইকেল
আমদানিকৃত বাইসাইকেলের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বাড়তে পারে আমদানি করা বাইসাইকেলের দাম।
কম্পিউটার
স্থানীয়ভাবে বর্তমানে কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তাই কম্পিউটার ও কম্পিউটারসামগ্রী আমদানির কয়েকটি পণ্যের ওপর রেয়াতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রক্সিমিটি কার্ডস অ্যান্ড ট্যাগস। ফলে বাড়তে পারে কম্পিউটারের দাম।
কোমল পানীয়
কোমল পানীয় খাতে বিদ্যমান টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। যার কারণে বাড়বে দাম।
কলম
এবারের বাজেটে কলমের ওপরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসবে। সুতরাং দাম বাড়তে যাচ্ছে এই প্রয়োজনীয় পণ্যটিরও।
চশমা ও সানগ্লাস
চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে এবারের বাজেটে। পাশাপাশি উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে।