:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
শুক্রবার ১৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার ছাড়পত্র পাওয়ার পর হাসপাতালের নানা প্রক্রিয়া শেষ করে বিকাল সোয়া ৬টার দিকে গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ পৌঁছান সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
বিকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানান খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
খালেদা জিয়া এখনও সুস্থ হননি জানিয়ে মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলেছেন, হার্টের যে ঝুঁকি নিয়ে খালেদা জিয়া হাসপাতালে এসেছিলেন, সেটা এখন স্থিতিশীল আছে। কিন্তু তিনি এখনও সুস্থ হননি। তবে দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে তাকে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তাকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হৃদরোগে বিশেষজ্ঞ ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদার বলেন, শি ইজ ডুইং ফাইন। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি (খালেদা জিয়া) কোভিডে আক্রান্ত হলে ক্রিটিক্যাল পজিশনে চলে যেতে পারেন। তাই তাকে আমরা বাসায় রেখে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজন হলে আবারও খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার খাদ্যনালীর যে সমস্যা ছিল, সেটি এখন কী অবস্থায় আছে তা দেখা সম্ভব হয়নি।
কারণ সেই ধরনের পরীক্ষা করার মতো এই মুহূর্তে তার শারীরিক অবস্থা নেই।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের আরেক চিকিৎসক ডা. এফ এম সিদ্দিক বলেন, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে পানি চলে এসেছিল। পরে বিশেষ ইনজেকশন দিয়ে সেই পানি সরানো হয়। এখন তার হার্টে পানি নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা রোগীকে (খালেদা জিয়া) এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বাসা থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারছি। আর বাসায় প্রতিদিনই আমাদের মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক তাকে মনিটরিং করেন। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তিনি সুস্থ না হওয়ার পরও কোভিডের কারণে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এফ এম সিদ্দিকী বলেন, খালেদা জিয়া এখনও ঝুঁকিতে আছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নেয়ার সুযোগ এখন মোটামুটিভাবে আছে। এখন পর্যন্ত বিমানে ভ্রমণ করার শারীরিক সক্ষমতা আছে। উনার সবগুলো জটিলতার চিকিৎসা করতে হলে বা সুস্থ করতে হলে যা করা দরকার তা দেশে আমরা পুরোপুরি করতে পারছি না। সেই সক্ষমতা, মেডিকেল সেটআপ আমাদের এখানে নেই। তার সুষ্ঠু চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। এজন্য আমার আগেও বলেছি, এখনও বলছি তার সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের ধরন ওমিক্রন ভয়াবহ না হলেও খালেদা জিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তার আগের যে লিভার সিরোসিস, ফুসফুসের সমস্যা, সেটি এখনও আছে। তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। আমরা যে তার শারীরিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করে রেখেছিলাম, সেটা এখন কি অবস্থায় আছে তা জানি না। কারণ গত ছয় মাসে সেটার ফলোআপ করতে পারিনি। এখনও তার হৃদরোগের সমস্যার কারণে এন্ডোস্কোপি করা সম্ভব হয়নি।
গত ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যাথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। তার শারীরিক সর্বশেষ অবস্থা জানাতে এভারকেয়ার হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে শুক্রবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে মেডিকেল বোর্ড। এতে বোর্ডের প্রধান ডা. শাহবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এখনো অসুস্থ। তিনি যে অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিলেন সেই অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কিন্তু অন্যান্য উপসর্গ যেমন লিভার সিরোসিসের রক্তক্ষরণ বিপজ্জনক অবস্থায় আছেন। কিডনি সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। হার্টের দুইটা ব্লক এখনো রয়ে গেছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি কোভিড বাড়ছে বলে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে আপাতত বাসায় নেয়া হোক। পরে যদি কোনো কমপ্লিকেশন হয় তাহলে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। তার ছোট ভাইয়ের গাড়িতে করে ‘ফিরোজায়’ পৌঁছান তিনি। এ নিয়ে গত দেড় বছরে পাঁচ দফা তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
৭৭ বছর বয়সী খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সেরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় রয়েছে তার।