:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঢাকা ও কুমিল্লায় আওয়ামী লীগের হামলায় বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বরকতউল্লাহ বুলুর অবস্থা গুরুতর। এছাড়া তাঁর স্ত্রী শামীমা বরকত লাকী, বেগমগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মহিউদ্দিন, শরিফ হোসেন আহত হন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সারওয়ার জাহান ভূঁইয়া (দোলন) বলেন, বিকেলে নোয়াখালীর নিজ এলাকা বেগমগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন বরকতউল্লা। ফেরার পথে বিপুলাসার বাজারে তাঁকে বহন করা গাড়ির চাকা পাংচার হয়। পরে বিপুলাসার বাজারে বিপুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ হোসেনসহ মহাসড়কের পাশে একটি দোকানে চা পান করছিলেন। এই সময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁর ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। এতে তাঁর শরীরে জখম হয়। বরকতের স্ত্রী ও যুবদলের এক নেতা আহত হন। পরে তাঁকে সেখানে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে কুমিল্লায় আনা হয়।
রাত আটটায় কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাগোয়া কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর মিয়ামি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বরকতউল্লা। তিনি সেখানে তাঁর ওপর হামলার বর্ণনা দেন। তিনি অতর্কিতভাবে হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই তাঁর ওপর লাঠিসোঁটা, রড নিয়ে হামলা করে তাঁকে রক্তাক্ত করেন। তাঁর মাথায় তিনটি আঘাত করা হয়। তাঁকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করা হয়। তাঁর স্ত্রীর ওপর হামলা করেন। দলীয় নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। ৮ থেকে ১০ জন এই হামলা করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বিপুলাসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমি তিন দিন ধরে ঢাকায় আছি। কারা হামলা করেছে, তা বলতে পারব না।’
মনোহরগঞ্জ থানার নাথেরপেটুয়া পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাওহার ইকবাল বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছি। মোটরসাইকেলে করে এসে দুই থেকে তিনজন লোক অতর্কিত হামলা করে চলে যান। এখন অভিযোগ করলে পুলিশ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে।’
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে দলের ৩ কর্মী নিহতের প্রতিবাদে বিএনপির পূর্বঘোষিত মোমবাতি প্রজ্বলন ও মৌন অবস্থান কর্মসূচি ছিল।
শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আয়োজনে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বনানীর কাকলী থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালনের আয়োজন করা হয়। পুরো এলাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করেন।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর কামাল আতার্তক অ্যাভিনিউয়ের এক পাশে মোমবাতি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান বিএনপির নেতাকর্মীরা। তখন রাস্তার উল্টোদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন।
বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি চলাকালে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন। রাত পৌনে আটটার দিকে কর্মসূচির প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষ করার পরপরই ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে একযোগে হামলা করলে সবাই বনানী কে ব্লকের ২৬ নম্বর রোড দিয়ে সরে যান। এ সময় ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন। কর্মসূচিতে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানকে কয়েকজন ধরাধরি করে রাস্তা পার করেন। এ সময় সেলিমা রহমানসহ দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আহত হন। হামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়ালকে রক্তাক্ত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হামলার আগে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে কামাল আতার্তুক অ্যাভিনিউয়ের তিনটি স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মহড়া দেন। এ সময় ঘুরে ঘুরে রাস্তায় তাদের মিছিল করতে দেখা যায়। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দুটি মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার উদ্দেশ্যে তেড়ে যান। সে সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ কাদের খান, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন ও বনানী থানা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত হন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবারসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
অপরদিকে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বনানী কাঁচাবাজারের পাশে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেয়।
নয়াপল্টনে এ কর্মসূচির প্রায় একই সময়ে একই দাবিতে রাজধানীর বনানীতেও বিএনপির প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা ছয়টার আগেই বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের এক পাশ (যেখানে বিএনপির কর্মসূচি ছিল) দখলে নিয়ে নেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। পরে তাঁরা বিএনপির কর্মীদের ওপরে হামলা চালান।
নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শোডাউন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এরপর পর্যায়ক্রমে দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে আসতে থাকেন।
সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন মির্জা ফখরুল। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিজে মোমবাতি জ্বালিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতা–কর্মীদেরও মোমবাতি জ্বালানোর অনুরোধ করেন।
ঢাকার বনানীতে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, এই স্বৈরাচারী সরকারকে যদি হটাতে হয়, তাহলে রাস্তায় তার ফয়সালা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলন করছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বক্তব্যের আগে থেকেই বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রাস্তা দখলে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। এর উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে কীভাবে আওয়ামী লীগ এ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে অর্থাৎ এই যে জনগণের দুর্ভোগ, এই দুর্ভোগে তারা বিচলিত নয়। তারা দুর্ভোগ সৃষ্টি করার পক্ষে মিছিল করছে, আমাদের বাধা দিচ্ছে।’
কোনো বাধা এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে রুখতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এ সরকারের হাত থেকে এই দেশকে রক্ষা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মুক্ত করব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে এসে রাজনীতি করার স্বাধীন সুযোগ সৃষ্টি করব।’