:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল হক পারভেজ হত্যা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিঝিল জোনের ডিবির পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।
তাদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবী জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৬ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিএনপির নেতা আমীর খসরু বলেন, বিএনপির তো সহিংসতা করার কোনো দরকার নেই। কারণ, বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ লোক জড়ো হয়। নদী সাঁতরে, সরকারের মামলা–হামলাসহ সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে বিএনপির সমাবেশে মানুষ জড়ো হয়।
আমীর খসরু আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, সেটিই প্রথম বানোয়াট মামলা নয়। এ রকম শত শত বানোয়াট গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অভিধানে (ডিকশনারি) গায়েবি মামলা নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে। বিশ্বের কোথাও এ রকম গায়েবি মামলা হয় না।’
বিএনপির ৫০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার অভিযোগ তুলে আমীর খসরু আদালতকে বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এই অবৈধ অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখলের জন্যই বানোয়াট মামলা দিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমরা কেন সহিংসতা করতে যাব? আমাদের তো সহিংসতার দরকার নেই। আমরা মহাসমাবেশ ডাকলে লাখ লাখ লোক জড়ো হয়। দুঃখের বিষয় যে সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। তাঁদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এই মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০ থেকে ৩০ লাখ লোক সমাবেশে জড়ো হয়। অনেক ঘটনা ঘটেছে। সেসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দুবেলা খেতে পারছে না। ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গুলশানের একটি বাসা থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া গুলশানের একটি বাসা থেকে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপনকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুক মিয়া বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল কবির রিজভী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুস সালাম, নিপুণ রায়, আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে এই গ্রেফতার অভিযান চলছে। গত রোববার (২৯ অক্টোবর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে ওই ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘর্ষের এই ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে গুলশান এলাকা থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর (উত্তর) যুবদলের সদস্যসচিব সাজ্জাদুল পারভেজ ও সদস্য গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁদেরকেও ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পুলিশের আবেদনে বৃহস্পতিবার এই তিনজনেরও আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।