:: ফজলে এলাহী ::
আপনি, আমি বা আমরা যতবড় বিএনপি সমর্থক হইনা কেন একটা কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের দলীয় পররাষ্ট্র ও সাংস্কৃতিক উইং দুটো কার্যত অকার্যকর হয়ে আছে যা আমাদের ব্যর্থতার অন্যতম দুটো কারণ। অথচ বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুটো উইংয়ের কার্যকারিতা অপরিহার্য।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটা দেশের বৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের পররাষ্ট্র বা কূটনৈতিক উইং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও জোরালো ভূমিকা পালন করে থাকে যেখানে কাজ করে দেশসেরা অভিজ্ঞ কূটনৈতিকরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সত্য যে বর্তমানে বিএনপির কূটনৈতিক উইং স্মরণকালের সবচেয়ে অপরিপক্ক উইং। বর্তমানে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ে অভিজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোন পেশাদার কূটনৈতিক কাজ করেন বলে আমার জানা নেই। এখন কূটনীতিক উইংয়ের দায়িত্ব যাদের হাতে দেয়া হয়েছে তাঁরা মূলত কর্মজীবনে ব্যবসায়ী হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত এবং যারা আগে কখনও কোন পর্যায়ে কূটনৈতিকের ভূমিকা পালন করেননি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একটি দলের কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি সেটা বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে পরিস্কার করতে হয়, তাদেরকে আস্থায় আনতে হয়। বৈশ্বিক রাজনীতিতে এখন অনেক বেশি পরিবর্তন এসেছে যার মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার কারণেই কূটনৈতিক কৌশলে পরিবর্তন এনে মুসলিম বিশ্বের তীর্থদেশ ও ধনী সৌদি আরব মুসলিমদের চিরশত্রু ইসরায়েলের সাথে বন্ধুত্ব করেছে, আবার ক্ষুদ্র নেপাল তার প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতকে চোখ রাঙানী দিচ্ছে। এখন আর কেউ চিরবন্ধু ও চিরশত্রু নীতিতে অটল নয়। এসবই শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতির প্রতিফলন। এই চলমান বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলকে তাল মিলিয়ে নিজেদের পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারন করে এগিয়ে যেতে হয়, তা নাহলে দেশের বাহিরে আপনার দলের অবস্থানটা মজবুত হয়না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপনাকে আস্থায় নিতে না পারলে আপনি গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েও বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন না যার উদাহরণ বর্তমান বিশ্বে একাধিক আছে। নিজেদের ভুল স্বীকার করাটাতে লজ্জার কিছু নেই কিন্তু ভুল ভুলটা চিহ্নিত না করে বারবার একই ভুল করাটা অযোগ্যতা, অদক্ষতার প্রমাণ।
বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে অবহেলিত ও অকার্যকর উইং হচ্ছে সাংস্কৃতিক উইং বা গ্রুপটি। এই গ্রুপটির ব্যর্থতার জন্য যতটা না বিএনপিপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীরা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা। বলা যায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পর বিএনপির সাংস্কৃতিক উইং নিয়ে আর কেউই ভাবেনি। অথচ বিএনপির সাংস্কৃতিক গ্রুপটি হতে পারতো প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক গ্রুপের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, জনপ্রিয় এবং সাংস্কৃতিক মনা জনগোষ্ঠীর কাছে আদর্শ একটা গ্রুপ। বিএনপির সাংস্কৃতিক গ্রুপে দেশের যে গুনীজন ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের পদচারণা রয়েছে তা বহু বিএনপি সমর্থকেরাই জানে না আর সাধারণ মানুষের না জানার কথা নাইবা বললাম। যে ব্যক্তির লেখা গান আওয়ামী লীগের দলীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যক্তি যে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত সেটা কজন জানে? আওয়ামীলীগের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীরা বা বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে তা বিএনপি কখনও তুলে ধরতে পারেনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলো বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীদের রচিত এটাও বহু বিএনপির সমর্থকেরা জানে না।
বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে অবহেলিত ও অকার্যকর উইং হচ্ছে সাংস্কৃতিক উইং বা গ্রুপটি। এই গ্রুপটির ব্যর্থতার জন্য যতটা না বিএনপিপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীরা দায়ী তার চেয়ে অনেক বেশি দায়ী বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা। বলা যায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পর বিএনপির সাংস্কৃতিক উইং নিয়ে আর কেউই ভাবেনি। অথচ বিএনপির সাংস্কৃতিক গ্রুপটি হতে পারতো প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক গ্রুপের চেয়েও বেশি শক্তিশালী, জনপ্রিয় এবং সাংস্কৃতিক মনা জনগোষ্ঠীর কাছে আদর্শ একটা গ্রুপ। বিএনপির সাংস্কৃতিক গ্রুপে দেশের যে গুনীজন ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গের পদচারণা রয়েছে তা বহু বিএনপি সমর্থকেরাই জানে না আর সাধারণ মানুষের না জানার কথা নাইবা বললাম। যে ব্যক্তির লেখা গান আওয়ামী লীগের দলীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যক্তি যে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত সেটা কজন জানে? আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক হাতিয়ার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীরা বা বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে তা বিএনপি কখনও তুলে ধরতে পারেনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলো বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীদের রচিত এটাও বহু বিএনপির সমর্থকেরা জানে না।
এই না জানা বা তুলে না ধরার দায়টা বিএনপির নীতিনির্ধারণীর অবহেলার দায়। বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা গতানুগতিক মাঠের রাজনীতিকেই ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্ব দিয়েছে, কখনও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে গুরুত্ব দেয়নি। অথচ একজন নেতার বক্তৃতা বিবৃতির চেয়ে একটা গান,নাটক,চলচ্চিত্র,গল্প,উপন্যাস, কবিতা সাধারণ মানুষের মনে খুব সহজে গেঁথে যায় এবং মানুষ তার ভালোলাগা গান,কবিতা,চলচ্চিত্র, নাটক, উপন্যাসগুলো সংগ্রহ করে রাখে যা তার চিন্তা চেতনায় একটা পরিবর্তন আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ” কি এবং কেন মানুষ তা গ্রহণ করবে এটা প্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড।প্রতিপক্ষের ভাষাগত বাঙালী জাতীয়তাবাদ যে শুধুমাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশকেই ধারণ করেনা সেটা বুঝাতে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড অপরিহার্য। ভাষাগত জাতিসত্তার পরিচয়ের বিপরীতে আপনার রাষ্ট্রীয় জাতিসত্তার পরিচয়টা অনেক বেশি শক্তিশালী সেটা সাধারণ মানুষকে বুঝাতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে একমাত্র সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যা একজন রাজনীতিবিদের চটকদার গতানুগতিক বক্তৃতা কখনও পারে না এবং সম্ভবও নয়। অথচ বিএনপির সবচেয়ে দুর্বল গ্রুপ হলো সাংস্কৃতিক গ্রুপ যারা কার্যত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এর প্রচার প্রসারের চেয়ে ভোটের রাজনীতিতে নিজেদের যুক্ত করতে ব্যস্ত। ফেসবুক, ইউটিউব কোথাও বিএনপির সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দকে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ” নিয়ে কাজ করতে দেখা যায়না। এর পিছনেও দায়ী বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা যারা ক্ষমতায় থাকতেও কখনও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি এবং ক্ষমতার বাহিরে থাকাকালীন সময়েও নয় যার ফলে সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দের মধ্য গতানুগতিক রাজনীতি করাটাই যৌক্তিক মনে হয়েছে। অপরদিকে প্রতিপক্ষ তাদের সবটুকু ক্ষমতার সদব্যবহার করে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আবেগটাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। মানুষের আবেগ নিয়ে অপরাজনীতি করে আওয়ামী লীগ এখনও অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে আছে। বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা আত্নতৃপ্তির জন্য বলতে পারে ” আমরা মানুষের আবেগ নিয়ে অপরাজনীতি করিনা ‘ এতে সাময়িক আত্নতৃপ্ত হলেও নিজেদের ব্যর্থতা/ অদক্ষতা লুকিয়ে রাখা যায় না। বাস্তবতা হলো প্রতিপক্ষ যেখানে সাধারণ মানুষের আবেগকে দুমড়ে মুচড়ে বারবার নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে সেখানে বিএনপি সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে অপরাজনীতি দূরে থাক কখনও সাধারণ মানুষের আবেগটা বুঝারই চেষ্টা করেনি।
চমৎকার বিশ্লেষণ