:: সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ::
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ৩টি মামলার মধ্যে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৪৪ জনের ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল সকাল ১০টায় এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে- হাবিুল ইসলাম হাবিব, আব্দুল কাদের বাচ্চু, রনজুকে যাবজ্জীবন এবং বিস্ফোরক আইনের মামলায় হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আব্দুল কাদের বাচ্চু, রনজু ও রিপন নামের চার আমামীকে অস্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি মামলায় বাকী ৪৪ জন আসামিকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আলোচিত এই মামলায় মোট ৫০ জন আসামিদের মধ্যে ৩৫ জন আদালতে হাজির ছিলেন রায় ঘোষণার সময়। ১৩ আসামি পলাতক রয়েছে। ২ জন মারা গিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব (৪৫), উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আশরাফ হোসেন (৪৫), উপজেলার যুবদলের সভাপতি আবদুল কাদের বাচ্চু (৪২), পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান রনজু (৪০), উপজেলা মৎস্য দলের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম (৪৬), সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি রিপন (৩৫), বিএনপি নেতা আবদুর রাজ্জাক (৪৮), উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তামিম আজাদ মেরিন (৪৫), উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল রকিব মোল্যা (৪৩), কলারোয়া পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা গাজী আক্তারুল ইসলাম (৩৮), বিএনপি নেতা মফিজুল ইসলাম (৪৪), পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল মজিদ (৩০), বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ (৫২), বিএনপি নেতা হাসান আলী (৪৫), উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আলী (৫৫)।
এ ছাড়া বিএনপি নেতা ময়না (৩৮), বিএনপি নেতা শিক্ষক আবদুস সাত্তার (৫০), সাবেক উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি খালেদ মঞ্জুর রোমেল (৪২), বিএনপি নেতা কলেজশিক্ষক তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু (৫০), যুবনেতা মাজাহারুল ইসলাম (৪৫), বিএনপি নেতা আবদুল মালেক (৩৮), বিএনপি নেতা আব্দুর রব (৪৬), উপজেলা কেরালকাতা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম (৪৩), যুগীখালী ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা বিএপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম (৫০), পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রসুল (৪৮), সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার (৫২), যুবদল নেতা রিংকু (৩২), যুবদল নেতা আবদুস সামাদ (৪৮), বিএনপি নেতা আলাউদ্দীন (৩৪), যুবদল নেতা আলতাফ হোসেন (৩৮), উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিকুর রহমান সনজু (৩৩), ছাত্রদলের সহসভাপতি নাজমুল হোসেন (৩০), বিএনপি নেতা সাহাবুদ্দিন (৪৯), বিএনপি নেতা সাহেব আলী (৪৮), বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম (৫৫), যুবনেতা টাইগার খোকন (৩৮), যুব নেতা ট্রলি সহিদুল (৪২), বিএনপি নেতা কনক (৩৮), পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ কামরুল হোসেন (৫০), যুবদল নেতা মনিরুল ইসলাম (৩০), যুবদল নেতা ইয়াছিন আলী (৩৫), পৌর বিএনপির সহসভাপতি আখলাকুর রহমান শেলী (৩২), বিএনপি নেতা শাহিনুর রহমান (৫২), বিএনপি নেতা বিদার মোড়ল (৪০), যুবদল নেতা সোহাগ হোসেন (২৮), বিএনপি সমর্থক মাহাফুজার রহমান মোল্যা (৩৮), জামায়াত কর্মী গফফার গাজী (৪০), সাবেক উপজেলা যুবদলের সহসভাপতি মাহাফুজুর রহমান সাবু (৫০) মামলার আসামি।
এদের মধ্যে মাহাফুজুর রহমান সাবু ও লাকি কারাগারে থাকাকালীন মারা গেছেন। নাজমুল হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, আবদুল কাদের বাচ্চু, রিপন, মফিজুল ইসলাম, খালেদ মঞ্জুর, রোমেল, মাজাহারুল ইসলাম, আবদুল মালেক ও রবিউল ইসলাম পলাতক।
রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে মামলা পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, পিপি শম্ভুনাথ সিংহ, অতিরিক্ত পিপি ফাহিমুল হক কিসলু, হাইকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন প্রমূখ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিজানুর রহমান পিন্টু, আব্দুল মজিদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহানারা পারভিন বকুল।
সাতক্ষীরা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, এই মামলায় ২৫ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য, ঘটনার পারিপার্শিকতা ও অন্যান্য কাগজপত্র পর্যালোচনা করে আদালত এ রায় দিয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম জানান, সম্পূর্ন সাজানো ও মিথ্যা মামলায় এ রায় দেওয়া হয়েছে। ঘটনার দিন মামলার প্রধান আসামি সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষণের শিকার মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যশোরে ফেরার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ দলীয় অনেক নেতাকর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত হামলার মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ অন্যান্য আসামিদের চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির। আজ এই মামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরণ মামলায় রায় ঘোষনা করা হলো।