:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসছে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর)। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) একাধিক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিইআরসির সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার সকালে নতুন দাম ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পাইকারিতে দাম বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে না।’
চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পিডিবি ভর্তুকি তুলে দিয়ে বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৬৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবে বর্তমান দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব করে বিপিডিবি।
গত ১৮ মে বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে গড়ে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে জ্বালানি খাতের দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।
নিয়ম অনুযায়ী- ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে শুনানির রায় ঘোষণা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ১৩ অক্টোবরের মধ্যেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে হবে।
বিইআরসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইকারিপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। তবে গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম এখনই বাড়ছে না। কারণ বিদ্যুৎ বিতরণকারী সব কোম্পানি বর্তমানে মুনাফায় রয়েছে। তাই বাল্ক বিদ্যুতের দাম ২০-২৫ শতাংশ বাড়ালে তাদের খুব একটা সমস্যা হবে না।’
বিইআরসির একাধিক সূত্র জানায়, কমিশন ১৫-২৫ শতাংশের মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করে রেখেছে। এরই মধ্যে তা বিদ্যুৎ বিভাগে জমাও দেওয়া হয়েছে। সরকার চাইলে এটি কিছুটা বাড়াতে বা কমাতেও পারে। এক্ষেত্রে সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে তার ওপর নির্ভর করবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর হার।
বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে ইউনিটপ্রতি ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে আট টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল পিডিবি।
তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি গণশুনানিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভর্তুকি ছাড়া আট টাকা ১৬ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করে। ফলে সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, সেক্ষেত্রে দাম কিছুটা কম বাড়ানো হতে পারে। সরকার ভর্তুকি দিতে না চাইলে দাম কিছুটা বেশি বাড়তে পারে।
তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে কমিশন এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি বলে বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে না বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হতে পারে। আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। আগামীকাল বুধবার আবার বৈঠকে বসবে কমিশন। এরপর দাম বাড়ানো বা অপরিবর্তিত রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) বজলুর রহমান বলেন, বিদ্যুতে দাম নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার জানানো হবে। ভোক্তার স্বস্তির বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।
শুনানির পরবর্তী ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে আদেশ ঘোষণার আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। এ সময় শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। আজ এক বিজ্ঞপ্তিতে বিইআরসি জানিয়েছে, পিডিবির বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাব বা আবেদন-সম্পর্কিত কমিশন আদেশ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।
এর আগে পিডিবি গড়ে ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে গত ১৮ মে শুনানি করে বিইআরসি। এতে ভর্তুকি ছাড়া ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। যদিও ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন শুনানিতে।
দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এ বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হয়। এরপর ওই বিদ্যুৎ দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করে পিডিবি। এরপর তা কিনে বিতরণ কোম্পানিগুলো খুচরা দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। খুচরা দামও শুনানির মাধ্যমে বিইআরসি নির্ধারণ করে। আজ রাত পর্যন্ত দাম বাড়ানোর কোনো আবেদন বিইআরসিতে করেনি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে গত ১৩ জুলাই বিইআরসিতে একটি চিঠি দিয়েছে ক্যাব। এতে বলা হয়, জ্বালানি খরচ কমিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে লোডশেডিং করা হচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কথা থাকলেও এখন উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে কম। এতে জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানির অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এখন আর যৌক্তিক নয়।
গত এক যুগে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯ বার। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতে দাম। সর্বশেষ দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যা ওই বছরের মার্চ থেকে কার্যকর হয়। ওই সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানো হয় দাম। একই সময়ে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এদিকে গত জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। এরপর চলমান লোডশেডিংয়ের মধ্যেই গত ৬ আগস্ট থেকে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেলে সাড়ে ৪২ শতাংশ এবং পেট্রল-অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫১ শতাংশ। এরপর ব্যাপক সমালোচনার মুখে এক মাসের মাথায় লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানো হয় জ্বালানি তেলের দাম।