:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ৮ ঘণ্টা পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন চালুর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয়। রাত ৯ টায় সিস্টেম জেনারেশন ৮ হাজার ৪৩১ মেগাওয়াট এবং পরে জেনারেশন বৃদ্ধি করে সতর্কতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার কাজ চলছে।
জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলের বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র (ঘোড়াশাল, আশুগঞ্জ, মেঘনাঘাট, হরিপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ) চালু করে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হচ্ছে। রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ১ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হচ্ছে।
জাতীয় গ্রিডে অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার বেলা ২টা ৪ মিনিটে জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হয়েছে। অতি দ্রুততর সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। এ সময় দেশের উত্তর অঞ্চল (রাজশাহী, রংপুর) ও দক্ষিণ অঞ্চলের (খুলনা, বরিশাল) বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল।
মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজের ভেরিফারেড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ঢাকার মিরপুর, মগবাজার, মাদারটেক, রামপুরা, গুলশান, উলন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী, ধানমন্ডি (আংশিক), আদাবর, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, মিন্টো রোড, মতিঝিল, শ্যামপুর, পাগলা, পোস্তগোলাসহ বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি বাসাবাড়িতে পানি সংকট ও বহুতল ভবনে লিফট বন্ধ থাকায় বেশ কষ্ট পেতে হয় নগরবাসীকে।
মঙ্গলবার বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালগুলোতে ভর্তি থাকা রোগীরা নানামুখী ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি বিভাগে এ সমস্যা ছিল প্রকট। রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিনগুলো বিদ্যুতের অভাবে চলছিল না। ওয়ার্ড থেকে হাসপাতাল বারান্দা-টয়লেট কোথাও বিদ্যুৎ নেই। কেউ কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে অবস্থান করছিলেন। আবার অনেকে হাতপাখা দিয়ে রোগীদের বাতাস করছিলেন। চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও নিরাপত্তাকর্মীরা রোগীদের চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। বিলের পেমেন্টসহ দাপ্তরিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। অনেক চিকিৎসক চেম্বারে এসে বিদ্যুৎ না থাকায় রোগী না দেখে চলে গেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও স্টোর) ডা. আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের জানান, একান্তভাবে যেখানে প্রয়োজন সেখানে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ ও ওটিতে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেনারেটর টানা ১২ ঘণ্টা চলবে, তার পর সম্ভব নয়।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে এটিএম থেকে টাকা তুলতে সমস্যা
জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ব্যাংকের এটিএম সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএমে জেনারেটর বা বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ব্যাংকের অনেক গ্রাহক।
আজ বেলা ২টা ৫ মিনিটে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে।
সন্ধ্যার পর কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ ঘুরে কিছু বুথ বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় ঢাকার বাইরের অনেক এটিএমও অচল হয়ে পড়ে। আর যেসব এটিএম বুথ চালু ছিল, তাতে ভিড় দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএমের মধ্যে চালু ছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক সেবা, আইএফআইসি, ব্র্যাক, অগ্রণী, এবি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ। আর বন্ধ পাওয়া যায় ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এটিএম বুথ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্রাকে আছে একাধিক এটিএম বুথ। পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের গ্রাহকেরাও প্রতিবার বাড়তি ১৫ টাকার বিনিময়ে টাকা তুলতে পারেন। এ জন্য ফাস্ট ট্র্যাকে ভিড় দেখা গেছে।
ফার্স্ট ট্রাকের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, দুপুর থেকেই ভিড় শুরু হয়েছে, অন্যদিন এমন ভিড় থাকে না, তাই যেকোনো সময়ে টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে।
ব্যাংকের এটিএম সেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, সব এটিএমে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায়নি। আবার বিকল্প ব্যবস্থা থাকলেও তা সচল ছিল না। এমন সংকটের কারণে এখন বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে।
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে টেলিযোগাযোগ সেবায় বিঘ্ন
জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলীয় সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এতে টেলিযোগাযোগ সেবায়ও বিঘ্ন ঘটছে। গাহকরা জানিয়েছেন, মোবাইল ইন্টারনেট ও খুদে বার্তা পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে; কিছু ক্ষেত্রে কল করতেও আগের চেয়ে বেশি সময় লাগছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) বলছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন সমস্যা হচ্ছে। সাময়িক সময়ের জন্য টেলিযোগাযোগ সেবা বিঘ্নিত হতে পারে।
সাময়িক অসুবিধার জন্য গ্রাহকদের প্রতি এমটবের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বেজ ট্রান্সিভার স্টেশন (বিটিএস), যা মোবাইল টাওয়ার নামে পরিচিত। কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জেনারেটর দিয়ে ২ থেকে ৫ ঘণ্টা বিটিএস চালু করা যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে তখন জেনারেটর দিয়েও বিটিএসের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয় না।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্যানুযায়ী, জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে আজ দুপুর ২টা ৫ মিনিটে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এর পর থেকে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।