:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ‘শিরিন ম্যানসন’ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সোমবার ওই ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে।
আজ সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ভবনটির চারপাশে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
রোববার সকাল পৌনে ১১টার ভবনটির তিনতলায় বিস্ফোরণ হয়। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভবনে বিস্ফোরণ নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জানিয়েছে, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় গতকালের বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনের একজন টেইলার ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। বহু বছর ধরে ভবনটিতে ব্যবসা করছেন তিনি। সেখানে বেস্ট টেইলার নামে একটি দোকান আছে তার। তিনি জানান, গতকালের বিস্ফোরণের সপ্তাহখানেক আগে অজ্ঞাত ৪-৫ জন লোক এই ভবনটি মাপজোক করেন। হঠ্যাৎ দোকানের ভেতরে মাপার কারণ সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন ভবনের মালিক মাপতে বলেছেন। মালিকের কথা শুনে আর জনা হয়নি তারা কেন এই মাপামাপি করছেন।
তিনি আরও বলেন, ভবনের দ্বিতীয় তলায় আমার দোকান আর বিস্ফোরণ হয়েছে তৃতীয় তলায়। ঘটনার সময় আমার দোকানে ৩ জন কর্মচারী ছিলেন। তারা অক্ষত আছেন। তারা জানায় জন্মের পর তারা এমন ভয়ঙ্কর শব্দ শোনেনি।
আব্দুর রশিদ বলেন, এই ভবনের তৃতীয় তলায় কাল বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনো গ্যাসের লাইন নেই।
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত ভবনটির নাম শিরিন ম্যানসন। ভবনটির কেয়ারটেকার আবুল কালাম। বিগত ৪০ বছর ধরে তিনি চাকরি করছেন ভবনটিতে। অসুস্থ থাকায় গতকাল তিনি কাজে আসতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ৪ দিনের ছুটিতে উত্তরখানের বাসায় আছেন। তিনি জানান, বিধ্বস্ত ওই ভবনটির মালিক শিরিন শারমিন নামে এক ইংল্যান্ড প্রবাসী নারী। তার বোন জাকিয়া আবুল কালামের কাছ থেকে ভবনটির প্রতি মাসের ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন।
আবুল কালাম বলেন, এই জায়গার মালিক ছিলেন শিরিন শারমিনের বাবা। শিরিন পৈত্রিক সূত্রে এই জায়গার মালিক হন। এখানে আগে টিনের ঘর ছিল।
তিনি বলেন, ভবনে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গ্যাসের কোনো লাইন নেই। শুধু নিচ তলায় একটি খাবারের একটি হোটেল আছে। সেখানে রান্নার জন্য গ্যাসের লাইন আছে।
বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণে নিহত তিনজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার বটেশ্বর গ্রামের আবু সিদ্দিকের ছেলে সাদিকুর রহমান তুষার (৩১)। রাজবাড়ী সদর উপজেলার ধুলদী গ্রামের মৃত গোমেদ শেখের ছেলে শফিকুজ্জামান (৪৪) ও গাজীপুরের টঙ্গী কোনাপাড়া এলাকার মফিজউদ্দিন খলিফার ছেলে আব্দুল মান্নান (৬৩)।
ঢামেক হাসপাতালের মর্গ থেকে শফিকুজ্জামানের মরদেহ বুঝে নেন তার ভাই মহিউদ্দিন ও স্ত্রী পপি। মহিউদ্দিন বলেন, মরদেহ নিয়ে প্রথমে গাজীপুরের গেন্ডা এলাকায় যাওয়া হবে তারপর সেখান থেকে রাজবাড়ী যাবো। সেখানেই ভাইয়ের মরদেহ দাফন করা হবে।
আব্দুল মান্নানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার দুই ছেলে আশিক-শাকিল। মান্নানের ভাতিজা মামুন বলেন, চাচার মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে তার মেয়ে মনিরা আক্তার মিনহার কবরের পাশে দাফন করা হবে।
তিনি জানান, আব্দুল মান্নানের ১১ বছরের মেয়ে মিনহা মারা গেছে মাত্র ১৮ দিন আগে।
তবে এই বিষয়ে সাদিকুর রহমান তুষারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।