:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
২০১৯ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে সেমিফাইনালেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। চার বছর পর কিউইদের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় করে এক যুগ পর অপরাজিত থেকে ঘরের মাঠে ফাইনালে পৌঁছে গেল ভারত।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে আসরের প্রথম সেমিফাইনালে গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে কোহলিরা।
বিরাট কোহলির রেকর্ড গড়া ৫০তম সেঞ্চুরির দিনে ৩৯৭ রানের পাহাড় চড়তে গিয়ে কিউইরা থামে ৩২৭ রানে। ভারতের বোলারদের মধ্যে ওয়ানডে ইতিহাসে ম্যাচসেরা বোলিং করে মোহাম্মদ শামি ৭ উইকেট শিকার করেন।
৩৯৮ রানের লক্ষ্যে নেমে নিউজিল্যান্ড প্রথম ৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে করেছিল ৩০ রান। মোহাম্মদ শামি কিউইদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে শামিকে কাট করতে যান ডেভন কনওয়ে। এজ হওয়া বল বাঁ দিকে ঝাপিয়ে ক্যাচ ধরেছেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। কনওয়ে বিদায় নেওয়ার অল্প সময় পরেই বিদায় নেন আরেক কিউই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র। অষ্টম ওভারের চতুর্থ বলে রবীন্দ্রকেও কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেলেন শামি। নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয়ে যায় ৭.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৩৯ রান।
৮ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের হাল ধরেন কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। ইনিংসের নবম ওভার বোলিংয়ে আসা জসপ্রীত বুমরার ওভারটা পুরো মেডেন দিয়েছেন উইলিয়ামসন। প্রথম ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৬ রান। উইলিয়ামসনের ক্যাচ মিসের পর নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা বাড়তে থাকে দ্রুত গতিতে। ড্যারিল মিচেল ও উইলিয়ামসন একের পর এক বাউন্ডারি মারতে থাকেন। ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে শামিকে মিড উইকেটে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিচেল। মনে হচ্ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৯৮ রান করে ফেলতে পারে এই সেমি ফাইনালেই। এখান থেকেই ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে থাকেন শামি। একই ওভারের দ্বিতীয় বলেই ‘জীবন পাওয়া’ উইলিয়ামসনের উইকেটই তুলে নেন শামি। কিউই ব্যাটার ফ্লিক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে সূর্যকুমারের তালুবন্দী হয়েছেন। ৭৩ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৯ রান করেন উইলিয়ামসন। এই উইকেটেই শামির বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের ৫০তম উইকেট। তাতে ভেঙে যায় তৃতীয় উইকেটে উইলিয়ামসন-মিচেলের ১৪৯ বলে ১৮১ রানের জুটি।
উইলিয়ামসনকে যে ওভারে ফিরিয়েছেন, সেই ওভারেই শামি তুলে নিয়েছেন আরও এক উইকেট। ৩৩তম ওভারের চতুর্থ বলে টম লাথামকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন শামি। ভারতীয় এই পেসারের জোড়া আঘাতে ৩৩.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ২২০ রান। তাতে শামির বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের উইকেট সংখ্যা হয়ে যায় ৫১। ৪১তম ওভারে গিয়ে বিস্ফোরক হয়েছেন ফিলিপস। মোহাম্মদ সিরাজের করা সেই ওভার থেকে ২০ রান নিলে কিউইদের স্কোর হয়ে যায় ৪১ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪ উইকেটে ২৮৬ রান। ৪৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ফিলিপসের উইকেট তুলে নিয়েছেন বুমরা। তাতে কিউইদের স্কোর হয়ে যায় ৪২.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ২৯৫ রান। ৫ম উইকেটে ফিলিপস-মিচেল ৬১ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়েন।
ফিলিপসের উইকেট পড়ার পরই নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ভাঙন ধরা শুরু হয়। মার্ক চাপম্যান, মিচেল দ্রুত ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন। যেখানে ৪৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিচেলের উইকেট তুলে নিয়ে শামি বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ১ ইনিংসে চারবার ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন। পায়ের ব্যথা সামলে ১১৯ বলে ৯ চার ও ৭ ছক্কায় ১৩৪ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ স্কোর। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা কিউইরা ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। লকি ফার্গুসনের উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন শামি। ৯.৫ ওভারে ৫৭ রান খরচ করে নিয়েছেন ৭ উইকেট। বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে এটাই সেরা বোলিং। ম্যাচসেরাও হয়েছেন শামি।
বিরাট কোহলি ১১৩ বলে ৯টি চার আর ২টি ছক্কার সাহায্যে ১১৭ রান করেন। ওয়ানেডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এদিন রেকর্ড ৫০তম সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। এতদিন ৪৯টি সেঞ্চুরি করে শীর্ষে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।
কোহলির সেঞ্চুরির দিনে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৬৭ বলে তিনটি চার আর ৮টি ছক্কার সাহায্যে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শ্রেয়াস আইয়ার। তিনি ৭০ বলে ৪টি চার আর ৮টি ছক্কার সাহায্যে ১০৫ রান করে ফেরেন।
কোহলির ও শ্রেয়াস আইয়ারের জোড়া সেঞ্চুরির দিনে দারুণ ব্যাটিং করেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। শুভমান ৬৬ বলের ৮টি চার আর তিনটি ছক্কায় ৮০* রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ২৯ বলের ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া ২০ বলে ৩৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন লোকেশ রাহুলও।
সেঞ্চুরির আশা দেওয়া গিল ৭৯ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যান। শেষ দিকে ক্রিজে এসে মাত্র ১ রান যোগ করে অপরাজিত থাকেন। তবে কোহলি ও আইয়ার সেঞ্চুরি করতে ভুল করেননি। কোহলি ১১৩ বলে নয়টি চার ও দুই ছক্কায় খেলেন ১১৭ রানের ইনিংস। ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৫০টি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন। এছাড়া বিশ্বকাপের এক আসরে শচীনকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ রানও করেন। আয়ারের ব্যাট থেকে আসে ৭০ বলে ১০৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। তিনি আটটি চার ও চারটি ছক্কার শট তোলেন।