:: ক্রীড়া প্রতিবেদন ::
ভারতের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছিল সবার আগে। নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৬০ রানের বড় জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ।
ভারতের দেওয়া ৪১১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে ডাচদের ইনিংস থামে ২৫০ রানে। এতে লিগ পর্বে অপরাজিত থাকল রোহিত-কোহলিরা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের সামলাতেই বেগ পেতে হয় ডাচ ব্যাটারদের। ৪৭.৫ ওভারে ২৫০ রানেই গুটিয়ে যায় অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের দল। ফিফটি হাঁকান তেজা নিদামানুরু (৫৪)। ৪৫ রান আসে সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের ব্যাট থেকে। সঙ্গে কলিন অ্যাকারম্যান ৩৫ ও ম্যাক্স ও ডাউড ৩০ রান এনে দিলেও লাভ হয়নি। ম্যাচে হাত ঘুরিয়ে একটি করে উইকেটও পান বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা। দুটি করে উইকেট নেন সিরাজ, বুমরাহ, কুলদীপ ও জাদেজা।
এর আগে টস জিতে শুরু থেকেই ডাচ বোলারদের ওপর চড়াও হন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। দলীয় ১০০ রানে ৩২ বলে ৫১ রান করে আউট হন শুভমান গিল। গিল ফিরে গেলেও রানের ছন্দে মোটেও ভাটা পড়েনি। বরং দ্বিগুণ আগ্রাসী হয়ে ওঠেন রোহিত শর্মা। তবে দলের স্কোরবোর্ডে ২৯ রান যোগ হতেই বিদায় নেন অধিনায়ক। তার আগেই গড়েন দুটি রেকর্ড। এবি ডি ভিলিয়ার্সকে টপকে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ৬০টি ছয় হাঁকানোর কীর্তি গড়েন রোহিত। ২০১৫ সালে ডি ভিলিয়ার্স ৫৮টি ছয় হাঁকিয়েছিলেন।
৫৪ বলে ৬১ রান করার পথে দুই ছয়ে সেটি ছাড়িয়ে যান রোহিত। একই সঙ্গে ছাড়িয়ে যান সৌরভ গাঙ্গুলিকেও। বিশ্বকাপে ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০৩ রান রোহিতের। ২০০৩ বিশ্বকাপে ৪৬৫ রান করে এই রেকর্ডটি ২০ বছর নিজের কাছে রেখেছিলেন সৌরভ। রোহিত বসেন শচীন টেন্ডুলকারের পাশেও। বিশ্বকাপে দুবার ৫০০ পেরোনো সংগ্রহ আছে শচীনের। সেই তালিকায় যোগ হলো রোহিতের নামও। রোহিতকে ফিরিয়ে নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন বাস ডি লিড।
দুই ওপেনার ফিরে গেলে শ্রেয়াস আইয়ার নিয়ে কোহলি দলগত স্কোর দুশতে নেন। তারপর থামেন। ব্যক্তিগত ৫১ রানে ভ্যান ডার মারউইয়ের শিকার হন কোহলি। বিশ্বকাপে সপ্তম হাফসেঞ্চুরিতে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেলা শচীন টেন্ডুলকার ও সাকিব আল হাসানের পাশে বসেছেন কোহলি। ২০০ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর আইয়ার ও লোকেশ রাহুল ডাচ বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মাতেন। বিশেষ করে রাহুল দৌড়ে কম রানই নিয়েছেন, চার-ছয়ে সাজিয়েছেন ইনিংস। ইনিংসের এক বল আগে থাকতেই আউট হন তিনি।
তার আগে আইয়ারের সঙ্গে তিনিও তুলে নেন সেঞ্চুরি। তাতেই ভারতের ইনিংস চারশ ছাড়ায়। ৬২ বলে তার এই সেঞ্চুরিটি ভারতের হয়ে বিশ্বকাপের দ্রুততম সেঞ্চুরি। এ আসরেই ৬৩ বলে রোহিতের সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙলেন রাহুল। রাহুল শেষ সীমানায় কাটা পড়লেও আইয়ার অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ৯৪ বলে ১০ চার ও ৫ ছয়ে ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাচসেরা আইয়ার।
ডাচদের হয়ে বাস ডি লিডি দুটি এবং ফন মিকেরেন ও মারওয়ে একটি করে উইকেট নেন।
এ জয়ে বিশ্বকাপের লিগপর্বে শতভাগ জয়ের রেকর্ড গড়ল অপ্রতিরোধ্য ভারত। প্রথম পর্বের ৯ ম্যাচের ৯টিতেই জয়লাভ করল স্বাগতিকরা। ভারতের জয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নিল বাংলাদেশ। পয়েন্ট তালিকার দশে থেকেই বিশ্বকাপ থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নিল লড়াকু নেদারল্যান্ডস।
গ্রুপপর্বে ৯ ম্যাচে ভারতকে হারাতে পারেনি কোনো দল। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বিশ্বকাপের রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৯ রানে অলআউট করে ৫২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের দাপুটে জয় পায় ভারত।
এরপর আফগানিস্তান, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ১৯১ রানে অলআউট করে ১১৭ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের দাপুটে জয় পায় ভারত। ভারতকে হারানোর টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৩৫৮ রান তাড়ায় ৫৫ রানে অলআউট হয়ে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা।
বাংলাদেশকে ২৫৬ রানে থামিয়ে ৫১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয় পায় ভারত। চলতি বিশ্বকাপের ২০ বছর আগে ২০০৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডেতে হারিয়েছিল ভারত। দীর্ঘদিন পর কিউইদের ফের হারায় কোহলিরা।
বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২৯/৯ রান করেও ইংলিশদের ১২৯ রানে অলআউট করে ১০০ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় ভারত। পরের ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩৫৭ রান করে লংকানদের ৫৫ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে জয় পায়।