:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার মারা গেছেন।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
সিরাজ সিকদারের বোন শামীম শিকদারের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তারা দুজনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
শামীম সিকদারের ভাস্কর্যগুলোর কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন তার মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
মো. ইমরান হোসেন বলেন, নিজের শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করতে কয়েক মাস আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন শামীম সিকদার। দেশে ফিরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
ইমরান হোসেন জানান, শামীম সিকদারের লাশ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বুধবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, চারুকলা অনুষদে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ শহীদ মিনার কিংবা তার যে কোনো একটি ভাস্কর্য প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তার পরিবারের সদস্য ও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহাম্মদপুরে শামীম সিকদারের বাবা-মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ইমরান।
শামীম সিকদার গত শতকের আশির দশকে চারুকলায় শিক্ষকতা শুরু করেন। অধ্যাপক হিসেবে অবসর নেওয়ার পর ৮ বছর আগে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান।
১৯৭৪ সালে এই ভাস্কর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে অবস্থিত। শামীম শিকদার ২০০০ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।
শামীম শিকদার চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের একজন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিতকলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
ফুলার রোড এলাকায় ‘স্বাধীনতাসংগ্রাম’-এ তাঁর করা ১১৬টি ভাস্কর্য রয়েছে। এখানে তিনি আরও ১৩৪টি ভাস্কর্য তৈরির কাজের বিষয়ে দেশে আসেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রয়ে গেল। ঢাবির চারুকলা অনুষদে জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্যটিও তিনি নতুন করে করতে চেয়েছিলেন।
৭০ বছর বয়সী শামীম সিকদার হৃদ্রোগ, শ্বাসতন্ত্র, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অসুস্থ হওয়ায় চার মাস আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যের কোনো উন্নতি না হওয়ায় মার্চের শুরুতে তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছয় দিন ধরে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন।
শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়ার মহাস্থান গড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে চলে যান।
শামীম শিকদারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গুয়ের্নিকা ভাস্কর্যও নতুন করে করার পরিকল্পনা ছিল বলে উল্লেখ করেন ইমরান। তবে সে কাজে তিনি বেশি দূর আগাতে পারেননি।