:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
আগামীতে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ভিসা নীতিতে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রোববার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া যারা বাধাগ্রস্ত করবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, ‘স্টেট ডিপার্টমেন্ট গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছেন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। একইভাবে যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্যও এটি কাজ করবে।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এসব ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির আওতায় ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা রয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের আজকের এসব পদক্ষেপ শান্তিপূর্ণভাবে সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যে লক্ষ্য রয়েছে, তার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এ ছাড়া এর মধ্য দিয়ে যারা বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায়, তাদের প্রতি সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তারও প্রতিফলন ঘটছে।’
ম্যাথু মিলার আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং বিশ্বব্যাপী অগ্রসর গণতন্ত্রকামীদের জন্য আমাদের আজকের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক সহযোগিতা কার্যক্রমের অংশ।’
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৪ মে নতুন একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে বলে বিবৃতি দিয়ে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। একই সঙ্গে ব্লিঙ্কেন এ-সংক্রান্ত একটি টুইটও করেন।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচনে অনিয়ম, জালিয়াতি, ভোট কারচুপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ দেওয়া হবে। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে কর্মরত বা সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারি দল বা বিরোধী দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্য।
বিবৃতিতে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আজ আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২ (এ) (৩) (সি) (“৩ সি”)-এর অধীনে একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে—ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে বাধা দেওয়া এবং নানা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।
তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসহ সবার। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সবাইকে আমাদের সমর্থন জানাতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
এ ছাড়া এক টুইটে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করছি। এই নীতি অনুসারে যদি কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে, তবে জড়িতদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।’
এর আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে র্যাব এবং এর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।