:: মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে পারভেজ খান (২০) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। শুক্রবার রাতে চরকেওয়ার ইউনিয়নের ছোট মোল্লাকান্দি এলাকায় এই সংঘর্ষ হয়।
নিহত পারভেজ খান ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামের ফরহাদ খানের ছেলে। এ ঘটনায় মোহাম্মদ রাব্বি খাঁ (১৯) নামের আরেক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুজনই আওয়ামী লীগের রাব্বি আহমদ পক্ষের সমর্থক।
বিবদমান পক্ষ দুটির এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী মামুন হাওলাদার, অন্য পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন আহমদ হাওলাদার।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খানকান্দি ও ছোট মোল্লাকান্দি গ্রামে মামুন হাওলাদারের সঙ্গে আহমদ হাওলাদারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে আগেও কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে আবারও বিবাদে জড়ায় দুই পক্ষ। এ সময় এক পক্ষ অন্য পক্ষের বাড়িঘর লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ চলে যাওয়ার পর ভোর ৫টার দিকে দুই পক্ষ আবারও সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় পারভেজ ও রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় তাঁদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পারভেজ মারা যান।
এ ব্যাপারে আহমদ হাওলাদার নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘রাতে মামুন হাওলাদারের ভাই সেলিম হাওলাদার আমাদের পক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর চালায়। ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় আমাদের লোকজন প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তাতে পারভেজ মারা গেছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জন। ১৫-২০টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন মামুন হালদার। তিনি বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে আমাদের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল আহমদ পক্ষের সন্ত্রাসীরা। পরে রাতে আমার লোকজনের বাড়িঘরে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে আমার পক্ষের ৮-১০ জন কর্মী আহত হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। ভোরে আবারও দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। যত দূর শুনেছি, মামুন পক্ষের হামলায় আহমদ পক্ষের একজন মারা গেছে। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।’
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। দুইজন গুলিবিদ্ধের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পারভেজ খানের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
ওসি আরও জানান, এই দুই গ্রুপই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আহম্মেদ গ্রুপ বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের অনুসারী এবং মামুন গ্রুপ সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাসের অনুসারী বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় নিহত পারভেজ বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের অনুসারী কর্মী।