:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আমাদের এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বড় উপায় দুটি। প্রথমত সুদ হার বাড়ানো। আরেকটি হল কর বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রয়ক্ষমতা কমানো। তবে আমরা তৃতীয় বিকল্প হিসেবে চাহিদা কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে। যে কারণে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। তারল্য সংকট না থাকলে সুদ হার নিয়ে আর কথা হবে না। কীভাবে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ হচ্ছে।
সরকার ইতোমধ্যে অনেক খাতে খরচ কমিয়েছে। আমদানি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের দর বেড়ে যাওয়ার কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই তার উন্নতি হবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা বলেন। এ সময় চার ডেপুটি গভর্নর, প্রধান অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশে মুদ্রা সরবরাহ কম। বাংলাদেশে মুদ্রা সরবরাহ জিডিপির ৪৩ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যা ৮৮ শতাংশ। মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গপুরে যথাক্রমে ১২০ এবং ১৫০ শতাংশ। এমনিতেই মুদ্রা সরবরাহ কম।
তিনি আরও বলেন, কোনো একটি ব্যাংক খারাপ করলে তার প্রভাব অন্য ব্যাংকের ওপর পড়ে। যে কারণে উচ্চ খেলাপিঋণসহ চার সূচকের ভিত্তিতে ১০টি ব্যাংক নিবিড় তদারকির আওতায় আনা হয়েছে। সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। পরিচালনা পর্ষদ কোনো বিষয়ে চাপ তৈরি করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে, এমন প্রচারণা আছে। তবে এ নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য কারও কাছে নেই। তবে এখন ৩০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে আপলোড করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত টিম এ তথ্য যাচাই করে কোনো অসঙ্গতি পেলে এলসি বন্ধ করা হয়।
একটি গোষ্ঠীর কাছে কয়েকটি ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে এবং এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো কাজ করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কে কোন ব্যাংকের মালিক, তা দেখার বিষয় নয়। সবগুলো ব্যাংক কমপ্লায়েন্স মেনে চলুক। সবগুলো ব্যাংক ভালো ব্যবসা করুক। সবার মূলধন ভিত্তি ভালো হোক।
গভর্নর বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা বা মূল্যস্ফীতির সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। তবে ৯ শতাংশের সীমা তুলে দিলে সুদ হার অনেক বেড়ে যাবে। অনেকদিন পর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশের ওপরে উঠেছে। বেসরকারি খাতে যে ঋণ বাড়ছে, তার বেশিরভাগই বিনিয়োগে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হচ্ছে। ফলে এ মুহূর্তে সীমা তুলে দিলে সুদ হার অনেক বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে উঠে আসা টাকা বাজারে ফিরে যাক। এতে তারল্য সংকট কেটে যাবে। তখন সুদ হারের সীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব আর থাকবে না। আমরা একটা ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করছি। খুব শিগগিরই ঋণের সুদ হার তুলে দেওয়ার চাপ কমে আসবে। বাজারে তারল্য বাড়াতে ইতোমধ্যে সিএমএসএমই খাতের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ব্যাংক-বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি একটা অনাস্থা এসেছে। সবাই তা জানেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আগে ব্যাংক নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একইভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ব্যাংকের একটি বৈঠকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে স্পষ্টভাবে কাজ করতে দিতে হবে। পরিচালনা পর্ষদ কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। তারা সিদ্ধান্ত দেবে। বাস্তবায়ন করবে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পর্ষদ চাপ তৈরি করলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুশাসনের বিষয়ে ‘নো টলারেন্স’।