:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে ১৮ বছর ধরে বাস করা ইরানি নাগরিকের মেহরান করিমি নাসেরি ইন্তেকাল করেছেন।
তার লেখা গল্প দিয়েই ‘দ্য টার্মিনাল’ নামের সিনেমা বানিয়েছিলেন বিখ্যাত পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ।
প্যারিসের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, টার্মিনাল-২এফ এ হৃদরোগে মারা গেছেন তিনি। অসুস্থ হওয়ার পর পুলিশ ও মেডিকেল টিম তার চিকিংসার ব্যবস্থা করেছিলেন। যদিও তাকে আর বাঁচানো যায়নি।
১৯৪৫ সালে ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের মসজিদে সোলেমান এলাকায় জন্ম নাসেরির। নিজের জিনিসপত্রের ট্রলি দিয়ে ঘেরা বেঞ্চে নাসেরি তার জীবন সম্পর্কে লিখে এবং বই ও সংবাদপত্র পড়ে দিন কাটাতেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে নাসেরির এই করুণ কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। ১৯৯৯ সালে শরণার্থীর মর্যাদা পেলেও ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরেই ছিলেন নাসেরি।
‘দ্য টার্মিনাল’ সিনেমা থেকে সালে পাওয়া ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে একটি হোস্টেলে থাকতেন তিনি। চার সপ্তাহ আগে আবারও বিমানবন্দরে ফিরে আসেন। যেখানে তার ১৮টি বছর কেটেছে। সেখানেই থাকতে শুরু করেন।
নাসেরি ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিমানবন্দরটির টার্মিনাল-১ এ বসবাস করেন। কারণ তার কাছে বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
তিনি সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের বাক্সে ঘেরা একটি লাল প্লাস্টিকের বেঞ্চে ঘুমাতেন ও সেখানের কর্মীদের স্থানে গোসল করতেন। ডায়েরিতে লিখে, ম্যাগাজিন পড়ে, অর্থনীতি অধ্যয়ন করে সময় কাটিয়েছেন।
১৯৯৯ সালে সংবাদমাধ্যম এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, কোনো এক সময় আমি এই বিমানবন্দর ছাড়বো। কিন্তু এখনো আমি পাসপোর্ট ও ট্রানজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছি।
নাসেরি ১৯৪৫ সালে ইরানের সোলেমান এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ইরানের অন্যদিকে মা ছিলেন ব্রিটিশ। ১৯৭৪ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু দেশে ফেরার পর ইরানের তৎকালীন শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন। এর জেরে তার পাসপোর্ট বাতিল করে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন নাসেরি। কিন্তু তিনি সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যান হন। এক পর্যায়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা তাকে বেলজিয়ামে আশ্রয় দেন। কিন্তু কোনো একদিন প্যারিসের ট্রেনে তার শরণার্থীবিষয়ক কাগজপত্র চুরি হয়ে যায়।
পরে প্যারিসের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তাকে কোথাও পাঠানো সম্ভব হয়নি কারণ তার কাছে কোনো দেশের বৈধ ডকুমেন্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৯৮৮ সালে তিনি চার্লস ডি গল বিমানবন্দরে আটকে যান। এরপর থেকে সেখানেই বসবাস করছিলেন।