সকাল থেকে সারা দেশ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিনএ জোটের জয়ের দিকেই নির্দেশ করছে। সেই হিসেবে আবারও দিল্লির এই মসনদে বসতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশব্যাপী ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিনএ জোট এগিয়ে আছে প্রায় ৩৪৮টি আসনে। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ হতে এখনও অনেকটা দেরি থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব অসমাপ্ত ফলাফল এই দলটির জয়ের কথাই জানাচ্ছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট ৯০ আসনে এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো এগিয়ে আছে ১০৩ আসনে।
প্রাথমিক গণনায় উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুজরাটের গান্ধীনগর কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
উত্তরপ্রদেশের আমেথি কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রথমে এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়েছেন। সেখানে এগিয়ে গিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানি। রায়বেরিলি কেন্দ্র থেকে প্রথমে এগিয়ে থাকলেও পরে পিছিয়ে পড়েছেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী। এই দুটি কেন্দ্রকে গান্ধী পরিবারের ‘খাসতালুক’ বিবেচনা করা হয়।
রাহুল গান্ধী গত পনের বছর ধরে আমেথি কেন্দ্রের সংসদ সদস্য। এর আগে তাঁর বাবা প্রয়াত রাজীব গান্ধী ও মা সোনিয়া গান্ধীও এই কেন্দ্র থেকে জিতে সংসদে গেছেন।
রাহুল গান্ধী অবশ্য এবার শুধু আমেথি নয়, কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড কেন্দ্র থেকেও লড়ছেন। সেখানে অবশ্য প্রাথমিক গণনায় তাঁর এগিয়ে থাকার আভাস পাওয়া গেছে।
উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর কেন্দ্র থেকে এগিয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী মেনকা গান্ধী।
যদিও এই এগিয়ে বা পিছিয়ে থাকা কেবলই গণনার প্রাথমিক পর্যায়ে। এখনো বাকি অনেকটা সময়।
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ১১ এপ্রিল। সাত দফায় ভোট শেষ হয় গত রোববার। এবার লোকসভা নির্বাচনে ৯০ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছেন।
এর আগে, গত ১৯ মে বুথফেরত জরিপের ফল প্রকাশ করা হয় যেখানে প্রায় সব জরিপে বেশ এগিয়ে বিজেপি। ওই জরিপে বলা হয়, বিশাল ব্যবধানে জয়ী হতে পারে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আরও একবার বসতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে বুধবার কংগ্রেসের পক্ষ বুথফেরত জরিপ্রে ফলাফলকে ভুয়া ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে সেই জরিপের ফলাফল প্রত্যাহার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, বুথফেরত জরিপের ফলাফল তিনি মানছেন না। এবার মোদি নয়, দিল্লির মসনদে বসবে জনগণের সরকার।
এদিকে সারা দেশ থেকে আসা ফলাফল অনুযায়ী এনডিটিভি জানায়, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটক,রাজস্থান ও গুজরাটে এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে বেশ এগিয়ে আছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। এছাড়া তামিল নাড়ুতে এগিয়ে আছে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট। আর পাঞ্জাবে এগিয়ে আছে কংগ্রেস।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে একরকম বলাই যায়, আগের বারের মতো এবারও ক্ষমতার আসনে বসছেন নরেন্দ্র মোদি। শেষ পর্যন্ত তার জয়ের পথে তেমন কোন বাঁধা না থাকলে তিনিই হয়ে যাচ্ছেন ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস বড় ধাক্কার প্রহর গুনছে। এ রাজ্যে ৪২টি আসন। এর মধ্যে ২১টি আসনে এগিয়ে তৃণমূল। আর যে বিজেপি গতবার দুটি আসন পেয়েছিল, তারা এগিয়ে ১৮ আসনে।
এ রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত, নায়ক দেব এগিয়ে আছেন। বিজেপির প্রার্থী রাজ্যের আসানসোল আসনে এগিয়ে আরেক তারকা মুনমুন সেনের চেয়ে। মুনমুন সেন তৃণমূলের প্রার্থী।
ভারতের হিন্দি বলয় নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখে। দেশটির সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশের ৮০ আসনের মধ্যে বিজেপি ৫৩ আসনে এগিয়ে আছে। এ রাজ্যে তারা ৭১ আসন পেয়েছিল। সেই তুলনায় বিজেপির আসন কমেছে। তবে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে রাজ্যের দুই চিরপ্রতিপক্ষ বহুজন সমাজ পার্টি ও সমাজবাদী পার্টি যে জোট বেঁধেছিল, তা দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছে। যদিও বহুজন ও সমাজবাদী পার্টি এবার যথাক্রমে ১৫ এবং ৭টি আসনে এগিয়ে আছে। এ রাজ্যে কংগ্রেস দুই আসনে এগিয়ে।
যে রাজ্যগুলোয় ক্ষমতায় কংগ্রেস আছে, সেগুলোতেও
বিজেপি এবার ভালো ফল করেছে। এর মধ্যে কর্ণাটকে ভূমিধস বিজয়ের পথে বিজেপি। রাজ্যের
২৮ আসনের মধ্যে ২৩টিতে এখন এগিয়ে বিজেপি। মধ্যপ্রদেশেও এগিয়ে বিজেপি। ওডিশায়
গতবারের মোদিঝড়েও বিজেপি ভালো করতে পারেনি। এবার এ রাজ্যে ১০ আসনে এগিয়ে বিজেপি।
রাজ্যগুলোর মধ্যে শুধু কেরালায় এখন এগিয়ে কংগ্রেস। এ রাজ্যে এখন
বামপন্থীরা ক্ষমতায়। রাজ্যের ২০ আসনের মধ্যে ১৮টিতেই কংগ্রেস এগিয়ে। দুটিতে
বামপন্থীরা। বিজেপি এ রাজ্যে কোনো আসন পাচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের ২০ হাজার কর্মীকে আজ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পার্টির সদর দপ্তরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
দলীয় নেতারা জানান, এই বৃহৎ সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘মহাস্বাগতম’ জানানোর জন্য। দলের পক্ষে সব বিজয়ী প্রার্থীকে ২৫ মের মধ্যে নয়াদিল্লিতে আসতে বলে দেওয়া হয়েছে।