:: তাহসিন আহমেদ ::
সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় ১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে নিহত হন রাউফুন বসুনিয়া। তিনি রংপুর জেলার ছেলে সমাজবিজ্ঞানের শেষবর্ষের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া তখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৮৫ সালের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা রাউফুন বসুনিয়া। ১৯৮৫ সালে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যমনি ছিলেন তিনি। স্থানীয় জন প্রশাসনকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে স্বৈরাচারের নীল নঁকশা বাস্তবায়নের তীব্র বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। সেই আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে বসুনিয়া রাজপথে স্বৈরশাসকের মসনদ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন।
সামরিক স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী প্রথম বড় ধরনের আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, যা মধ্য ফেব্রুয়ারির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত। আর এদিন থেকেই শুরু হয় সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ আমলের রক্ত ঝরার ইতিহাস। এদিন মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাতিল এবং সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কাঞ্চন, জাফর, জয়নাল, আইয়ুব, দিপালী ও ফারুক।
১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫ রাত ১১ টার দিকে স্বৈরাচার বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্বদানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটারী স্কুলের সামনে তৎকালীন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের গুণ্ডাদের গুলিতে নিহত হন। তার এই আত্মত্যাগ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে।
স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে আন্দোলন দমনে স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেয়া পেটোয়া বাহিনীর গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের মেধাবী ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্যুবরন করেন। ১৯৮৫ সালের বসন্ত দিন এরশাদ নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা, জাতীয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাউফুন বসুনিয়া।
১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫ রাত ১১ টার দিকে স্বৈরাচার বিরোধী এক মিছিলে নেতৃত্বদানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটারী স্কুলের সামনে তৎকালীন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের গুণ্ডাদের গুলিতে নিহত হন। তার এই আত্মত্যাগ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে।
১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে মহসিন হল পার হয়ে মূল রাস্তায় উঠতেই নতুন ছাত্র সমাজ গুলি করা শুরু করে। এতে মাঠিতে লুটিয়ে পরে জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র রাউফুন বসুনিয়া। রক্তে ভেসে যেতে লাগল কালো রাজপথ। বসুনিয়া ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেদিন নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বসুনিয়া। মিছিলটি যখন মহসিন হল পার হয়ে মূল রাস্তায় উঠছে তখন এফ রহমান হল থেকে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। মুহূর্তেই রাউফুন বসুনিয়ার রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। ফাগুনের রাজপথ রাঙা হলো বসুনিয়ার রক্তে। এরশাদ গঠিত “নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ” এর গুন্ডাবাহিনী সেদিন কেড়ে নিয়েছিলো রাউফুন বসুনিয়ার প্রাণ। এরশাদের পেটুয়া বাহিনীর নিশ্চিত গুমের হাত থেকে বসুনিয়ার লাশ উদ্ধার করেছিলেন সেই সময়ের ছাত্রদলের সানাউল হক নিরু।
রাউফুন বসুনিয়া হয়তো অনেকটা আত্মঅভিমানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে।
রাউফুন বসুনিয়া স্থানীয় পাঙ্গারানী লীপ্রিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পরে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে সেখানেই ভর্তি হন মাস্টার্সে। বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নজরুল ইসলাম আর মা ফিরোজা বেগমের স্বপ্ন যখন সত্যি হতে চলছিল ঠিক তখনই সংগ্রামী তাজা প্রাণটিকে কেড়ে নিল এরশাদের ঘাতকের বুলেট।
রাষ্ট্রীয় বা স্থানীয়, কোনোভাবেই এখনো মূল্যায়ন হয়নি শহীদ রাউফুনের। তাঁর স্মরণে কোনো স্থাপনা বা সড়কের নামকরণ করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁর মৃত্য দিবসে পারিবারিকভাবে মাদ্রাসায় মিলাদ দেওয়া হয়। কিন্তু দলীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি পালিত হয় না এলাকায়।
শহীদ রাউফুন বসুনিয়ার আত্মার শান্তি কামনা করছি