:: শাহরিয়ার হক মজুমদার শিমুল ::
বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির উদ্বোধন হয়েছে। তথাকথিত সেক্যুলার ভারতে অমিতাভ বচ্চনসহ বহু সেলিব্রেটি এই বর্বর কর্মকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে। এই উদ্বোধনকান্ডে যারা অংশ নিয়েছে, যারা গেরুয়া রঙ্গে প্রোফাইল রাঙিয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে সেসব ধর্মীয় উন্মাদদের আমি বর্জন করেছি। অমিতাভ, ক্যাটরিনা, রনবীর, আলিয়াদের মুভি ভবিষ্যতে না দেখার চেষ্টা করবো।
যাইহোক, এই পোস্টের আলাপের জায়গাটা ভিন্ন। হয়তো অনেকেই জানেন, মধ্যপ্রদেশের বিজেপিদলীয় মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেছে, এই রাম মন্দির অখন্ড ভারত গড়ার পথে এক বিরাট পদক্ষেপ। গত বছরের ২৮ মে ভারতের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের সময়েও তাদের সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি টুইট করে বলেছিল- সংকল্প স্পষ্টঃ অখণ্ড ভারত। কর্নাটক রাজ্য বিজেপিও অখন্ড ভারতের মানচিত্রের ছবি পোস্ট করে লিখেছিল- আমাদের গর্বিত মহান সভ্যতার জীবনী শক্তির প্রতীক।
বিজেপির মূল সংগঠন আরএসএস খুব খোলামেলাভাবেই বলে, অখন্ড ভারত তাদের অন্যতম মতাদর্শ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অখন্ড ভারত জিনিসটা কী? এই ধারণামতে, একসময় ভারতবর্ষের ব্যাপ্তি ছিল পশ্চিমে আফগানিস্তান (গান্ধারী কান্দাহারেরই কন্যা) থেকে পূর্বের মিয়ানমার ও উত্তরে তিব্বত থেকে দক্ষিণের শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত। অর্থাৎ তাদের কথামতো কোনদিন অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠিত হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা। এই অখন্ড ভারতের মানচিত্রের একটি ম্যুরাল ভারতের সংসদ ভবনে স্থান পেয়েছে। এটা স্পষ্টতই, একদম জেনেশুনে, প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অবমাননা।
এই বিষয়ে তৎকালীন অবৈধ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার স্বভাবসুলভ ফাঁপরবাজিতে বলেছিলেন, ঐ ম্যুরাল সম্রাট অশোকের সময়কার। এটা নিয়ে নাকি বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। কিন্তু ভারতের কোলে চড়ে যারা ক্ষমতায় থাকে, মোদি যাদেরকে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলেও ক্ষমতায় রাখতে চায়, যাদেরকে ক্ষমতায় রাখাটাকে তারা অখন্ড ভারত গড়ার পক্ষে সহায়ক মনে করে, তাদের মাথাব্যথা না থাকলেও বাংলাদেশপন্থীদের এই বিষয়ে উদ্বেগ আছে। উদ্বিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণ আছে।
অখন্ড ভারত আরএসএস এবং বিজেপির সবচাইতে বড় লক্ষ্য। এটা মোটেও গোপন কিছু না। অখন্ড ভারতের কথা বলার অর্থই হচ্ছে সরাসরি বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার করা। সেটা নিয়ে এদেশের ভারতপন্থীদের উদ্বেগ না থাকলেও আমাদের আছে। ইউক্রেনে হামলার আগে রাশিয়াও এভাবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব অস্বীকার করতো। ইসরায়েল নানান অপব্যাখ্যা দিয়ে এভাবেই ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে। এভাবেই যুগে যুগে দেশ দখলের গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়।
আমরা বারবারই বলি, আমাদের আজকের লড়াইটা ক্ষমতায় যাওয়ার কোন লড়াই নয়। ভারত এবং বিজেপি কেন যেকোন মূল্যে বিএনপিকে ঠেকিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় সেটা আপনার বোঝা উচিত। আমরা আমাদের জীবনের সর্বস্বটুকু দিয়ে লড়াইটা করছি। কিন্তু দেশ রক্ষার দায়িত্ব শুধু আমাদের না, আপনারও। দূরবর্তী ভবিষ্যতটা সম্পর্কে এখনই আপনার ভাবা প্রয়োজন।
আবার এটাও সত্য যে, কিছু গর্ধভদের মাথায় এগুলা কাজ করবেনা। পৃথিবীর শুরু থেকেই এরকম গর্ধভদের অস্তিত্ব ছিল। আগামীতেও থাকবে। এরা ভোটাধিকার হরনের নির্বাচনে ভোটাধিকার চর্চা করে, ফেসবুকে এসে কলঙ্কিত আঙ্গুলের ছবি পোস্ট করে। কিন্তু এই সিলটা যে একইসাথে অখন্ড ভারতের পক্ষে মেরে আসলো এটা বোঝার সাধ্যি এদের নাই। গর্ধভদের ঘিলুর সাইজ ঐটুকুনই হয়।