আরবি শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত পনের তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। এই রাতে একটি বছরের জন্য সৃষ্টি জগতের অদৃষ্ট বন্টন করা হয়। এই জন্য এই রাতের গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই কারণেই শাবান মাসের ফজিলত অনেক বেশি।
শবে বরাতের রাতে এশার নামাযের পর থেকে সুবেহ সাদিক অর্থাৎ ফজর পর্যন্ত নফল নামাজ ও বিভিন্ন ইবাদত পবিত্র কুরআন পাঠ, যিকির-আযকার, তসবিহ-তাহলীল করা যায়। এই রাতে কমপক্ষে ২ রাকাত করে ১২ রাকাত নফল নামায ও ৪ রাকাত সালাতুত তাজবীহ নামাজ পড়া অতি উত্তম।
এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, ‘এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুনাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন। তবে কেবল আল্লাহর সাথে শিরককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না।’
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে হুজুর (সা:) বলেছেন, ‘জিব্রাইল (আ:) আমাকে বলেছেন,আপনি আপনার উম্মতদের জানাইয়া দেন যে, তারা যেন শবে বরাতের রাতকে জীবিত রাখে। অর্থাৎ, সারারাত তারা যেন ইবাদতের মাঝে কাটাইয়া দেয়।’
আরেকটি হাদীসে রাসূল (সা:) বলেছেন,‘এই রাত্রে আসমান থেকে ৭০ লক্ষ ফেরেশতা যমীনে আসিয়া ঘুরিয়া ফিরিয়া এবাদতকারী-দিগকে পরিদর্শন করেন এবং তাদের এবাতদ সমূহ দেখতে থাকেন।’
অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যাক্তি সাবান চাঁদের পনের তারিখে রাতে ইবাদত করবে এবং দিনে রোজা রাখবে,দোজখের আগুন তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
পবিত্র শবে বরাতের নামাজের নিয়ত
আরবীতে নিয়ত
‘নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক‘আতাই সালাতি লাইলাতিল বারাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল কা‘বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার’।
বাংলায় নিয়ত
‘আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু‘রাআত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার’।
শবে বরাতের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী সওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরসী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক সওয়াবের কাজ।
শবে বরাতের নামাজ এবং নিয়ম কানুন
প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের নামাজ বলে আলাদা কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদতবন্দেগী করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।
সন্ধ্যায়
এই রাতে মাগরিব নামাজের পর হায়াতের বরকত, ঈমানের হেফাযত এবং অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য দু রকাত করে মোট ৬ রাকাত নফল নামাজ পড়া উত্তম।
৬ রাকাত নফল নামাজের নিয়ম
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা এরপর যে কোন একটি সূরা পড়তে হবে। দু রকাত নামাজ শেষে করে সূরা ইয়াছিন বা সূরা ইফলাছ শরীফ ২১ বার তিলায়াত করতে হবে।
দুই রাকাত তহিয়াতুল অযুর নামাজ
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার সূরা এখলাছ ।
ফযীলত প্রতি ফোটা পানির বদলে সাতশত নেকী লিখা হবে।
দুই রাকাত নফল নামাজ
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অত:পর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ।
ফযীলত
রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।
৮ রাকাত নফল নামাজ
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, সূরা এখলাছ ৫ বার করে। একই নিয়মে বাকি সব।
ফযীলত
গুনাহ থেকে পাক হবে, দু’আ কবুল হবে এবং বেশী বেশী নেকী পাওয়া যাবে।
১২ রাকাত নফল নামাজ
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর, ১০ বার সূরা এখলাছ এবং এই নিয়মে বাকি নামাজ শেষ করে, ১০ বার কলমা তওহীদ, ১০ বার কলমা তামজীদ এবং ১০ বার দুরূদ শরীফ।
১৪ রাকাত নফল নামাজ
প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা পড়ুন
ফযীলত
যে কোন দু’আ চাইলে তা কবুল হবে।
৪ রাকাত নফল নামাজ, ১ সালামে
প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পর ৫০ বার সূরা এখলাছ শরীফ।
ফযীলত
গুনাহ থেকে এমনভাবে পাক হবে যে সদ্য মায়ের গর্ভ হতে ভুমিষ্ঠ হয়েছে।
৮ রাকাত নফল নামাজ, ১ সালামে
প্রতি রাকাত সূরা ফাতিহার পর ১১ বার সূরা এখলাছ শরীফ।
আসুন এই পবিত্র রাতে আমরা বেশী বেশী করে নফল নামাজ পড়ি।