:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। আর সাক্ষরতার হার ৭৪.৬৬ শতাংশ। এই হিসাবে ৪ কোটি ১৮ লাখ ৫১ হাজার ১৯৩ জনের মধ্যে শিক্ষার ন্যূনতম আলো নেই। অর্থাৎ প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন নিরক্ষর।
সাক্ষরতা পরিস্থিতির এই অবস্থার মধ্যে আগামীকাল দেশে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘ট্রান্সফর্মিং লিটারেসি লার্নিং স্পেসেস’ (সাক্ষরতা শেখার স্থান পরিবর্তন করা)। দিবসটি সামনে রেখে আজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে। এতে দিবসের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হবে।
গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন যে, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অন্যদিকে গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী, সাক্ষরতার হার ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২০২০ সালে এটা ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এই হিসাবে করোনার মধ্যে কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও যেখানে আগের এক বছরে দশমিক ৯০ শতাংশ সাক্ষরতা বেড়েছিল, সেখানে তিন বছরের মধ্যে এবার সর্বনিম্ন হার দেখা যাচ্ছে। ২০২১ সালের তুলনায় এবার সাক্ষর মানুষের হার কমেছে প্রায় ১ শতাংশ।
এদিকে নিরক্ষতার উল্লিখিত চিত্র সত্ত্বেও বর্তমানে বয়স্ক মানুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার বাড়ানোর কোনো কার্যক্রম নেই। কেবল স্কুলে না যাওয়া এবং ভর্তির পর ঝরেপড়া শিশুদের ছোট আকারে সাক্ষর করার কর্মসূচি চলছে। দুবছর আগে এটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা বন্ধ রাখা হয়। পরে গত ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে এটি নিয়ে ইতোমধ্যে অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
দেশে সাক্ষরতা সংক্রান্ত কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই)। জানা গেছে, এই সংস্থাটির হাতে বর্তমানে বয়স্ক নিরক্ষরদের সাক্ষর করার কোনো কর্মসূচি নেই। সর্বশেষ ‘মৌলিক সাক্ষরতার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করে তারা। এর আওতায় ১৫-৪৫ বছর পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে সাক্ষরতার আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২০ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনার হিসাবও রয়েছে। গত ৩০ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এজন্য ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবে এজন্য একটি মেগা প্রকল্প নেওয়ার কাজ চলছে বলে বিএনএফই সূত্রে জানা গেছে।
তবে স্কুল থেকে ঝরেপড়া ও স্কুলে যায়নি এমন ৮-১৪ বছর বয়সিদের জন্য ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ শুরু করা হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় ২২ হাজার স্কুলের মাধ্যমে ৬ লাখ শিশুকে সাক্ষরতার আওতায় আনাসহ মূল ধারায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করানোর কথা ছিল। করোনার কারণে গত দুবছর এ কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু করা হয়। এ কারণে এখন বিকল্প স্কুলে এসব শিশুকে পঞ্চম শ্রেণির পরিবর্তে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘোষণা ছিল ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হবে। ক্ষমতায় আরোহণের দুবছর পর ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি করে সরকার। তাতেও উল্লিখিত সময়ের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিতের লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর আরও ৮ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো দেশে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর।
ইউনেস্কোর সংজ্ঞা অনুযায়ী সাক্ষরতা
পড়া, অনুধাবন করা, মৌখিকভাবে এবং লেখার বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। অর্থাৎ সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে, গণনা করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে স্বাক্ষরতা বোঝায়। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে জানা। গত জুনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০’ প্রকাশ করে। এতে সাক্ষরতার হার উল্লেখ করা হয় ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘সেল্ফ রিপোর্টেড’ সমীক্ষায় ‘আপনি কী লিখতে পারেন’-এমন প্রশ্ন এবং ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ উত্তরের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষরতার হার নির্ণয় করা হয়ে থাকে। আর ‘টেস্টেড’ সমীক্ষায় ব্যক্তিকে লেখানো ও পড়ানো হয়। এর ভিত্তিতে গণনাকারী স্বাক্ষর ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন।