:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার লক্ষ্যে সরকারকে এখনই পদত্যাগ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, এখনও সময় আছে, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমেই আপনাদের পতন হবে। সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছেন, আপনারা ভয় পাবেন না। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি। তার মানে কী? তার মানে তারা ভয় পেয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ছোট্ট একটা কর্মসূচি দিয়েছিলাম ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান। তারা এমন ভয় পেলো, পুলিশ বাহিনী, দলীয় গুন্ডা বাহিনী নিয়ে যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে ফেললো। একজন মুক্তিযোদ্ধা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষসহ সারাবিশ্ব তা দেখেছে।
গত ২৮ তারিখ বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ বোল্ড আউট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ’আওয়ামী লীগ বুঝতেই পারেনি কোন দিক দিয়ে বলটা এলো।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্যরা।
সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ’সবাই তো ক্রিকেট খেলা দেখেন, সবাই সাকিবকে খুব পছন্দ করেন। সাকিব একদিক থেকে খুব ভালো ব্যাটসম্যান আবার তিনি অফ স্পিন বল করেন। আরেকটা স্পিন আছে সেটাকে বলে গুগলি। ব্যাটসম্যান কিছু বোঝার আগেই বোল্ড আউট। আওয়ামী লীগ বিএনপির গুগলিতে বোল্ড আউট হয়েছে।‘
সমাবেশ পেছানোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ’সরকারের অবৈধ পুলিশ বাহিনী বলল তারা ২৭ তারিখ আমাদের সমাবেশ করতে দেবে না। আমরা বললাম, ঠিক আছে ২৮ তারিখই করব। যারা মিটিং পর্যালোচনা করেন তারা বললেন, ২৮ তারিখ ৫০ লাখ মানুষ হয়েছে।’
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে গদি ছাড়ার মেসেজ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ’২৮ জুলাই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সব মানুষ ওই সমাবেশে এসে হাজির হয়েছেন। প্রচণ্ড রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষগুলো একটাই মেসেজ দিয়েছে, তা হলো—হাসিনাকে অবিলম্বে গদি ছাড়তে হবে।’
বিএনপির সমাবেশকে সরকারি দল ভয় পায় জানিয়ে তিনি বলেন, ’আমরা একটা ছোট প্রোগ্রাম দিয়েছি ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি। আমরা হরতাল দিইনি, শুধু অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছি। এটাতে তারা ভয় পেয়ে সাঁজোয়া বাহিনী নিয়ে, তাদের দলীয় গুণ্ডা বাহিনী নিয়ে হাজার হাজার পুলিশ যুদ্ধের পোশাকে সেই প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়েছে। তারা নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে নাটক বানানো হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ’একজন প্রবীণ নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাস্তায় পিটিয়েছে। আমান উল্লাহ আমানের মতো সিনিয়র নেতাকে রাস্তায় পিটিয়েছে। এরা আমাদের নেতাদের মেরে একটা চিত্রনাট্য তৈরি করেছে। সেটা আবার ভিডিও করেছে। কত বড় ব্ল্যাকমেইলার। তাতে করে বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কি ছোট হয়ে গেছেন? এ দেশের মানুষ এ গল্প খায়নি।‘
সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ’এ সরকার এত ভীতসন্ত্রস্ত যে এরা আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। কালরাতে আমাদের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা করেছে, তল্লাশি করছে। স্ত্রী, সন্তানদের ঘরে আটকে রেখে তাদের বাবাকে তুলে নিয়ে আসছে। এভাবেই ১৫ বছর গদিতে টিকে আছে। এভাবে কি আন্দোলন আটকে রাখা যবে? ২৮ ও ২৯ তারিখ কি মানুষকে আটকানো গেছে? যায়নি। যতই চেষ্টা করা হোক মানুষের এ ঢল থামানো যাবে না। একটি বিষয় পরিষ্কার, দেশে ও বিদেশে এ সরকারের কোনো সমর্থন নেই। আমাদের কোনো রাখঢাক নেই, দুবার চুরি করে মানুষকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতায় গেছেন, মানুষকে আর বোকা বানানো যাবে না।’
এ সময় বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ’একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। আপনারা খেয়াল করেছেন? কয়েকটা লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে এনেছে। একজন আবার আমেরিকার লোক, তিনি নাকি কোন ফোরামের সভাপতি, সেই ফোরামের নামও কেউ কোনো দিন শোনেনি। তারা আবার ইলেকশন কমিশনে গিয়ে মিটিং করে সাংবাদিকদের বলে, এখানে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি চলবে না। আমরা বলি, কে তুমি? ওকে কেউ চেনেই না, কিন্তু সরকার ওকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে।’
এ সময় ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান মাওলানা আবেদ আলীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আরেকটা যে আছে, আবেদ আলী ওকেও কেউ চেনে না। এ রকম পরিচয়হীন লোকদের এনে বলা হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজন নেই। আমরা বলছি, এ দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। তারা নির্বাচন চায়, তবে হাসিনার অধীনে কোনে নির্বাচন চায় না। আমরা এই সরকারে অধীনে কোনো নির্বাচন চাই না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বারবার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এইবার আর তোমার ধান খাওয়া হবে না। দেশের বাম-ডান, সবাই এক হয়ে গেছে, সবাই চাইছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ভালোয় ভালোয় ক্ষমতা ছেড়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আমাদের একটাই দাবি।’
জনসমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের স্বৈরশাসন দেখেছি। কিন্তু এ সরকার যেভাবে শাসন করছে, সেটা কখনও দেখিনি। আমরা বাংলাদেশটা আওয়ামী লীগের কাছে ইজারা দিয়েছি নাকি? কোনো অত্যাচার নির্যাতন করে টিকে থাকতে পারবে না। এখনও সময় আছে জেলভাঙার আগেই গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভালোয় ভালোয় সালাম দিয়ে চলে যান। না হলে চলে যেতে বাধ্য হবেন। তখনোই হবে নাটকের শেষ। যত দ্রুত যাবেন ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল হবে। এ সরকারকে বাংলাদেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি বানচাল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেরাই বানচাল হয়ে গেছে। তারা এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে। এসব করে আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না।’
এই সরকারের সঙ্গে চোর ডাকাত ও লুটেরা ছাড়া কেউ নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা বারবার মার খেয়ে যাব, সেটা আর হবে না। এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি। আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করল, বাসে আগুন দিল আর আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে। এই হলো আওয়ামী লীগ। ওরা কুড়াল নিয়ে এলো সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু বলল না।’
জনসমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ।