যে সাহসী তুর্কি তরুণীর জন্য কাঁদে জার্মান নাগরিকেরা তিনি তুরস্কের নাগরিক তুগসি অ্যালবায়রাক (Tugce Albayrak)। জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ছিলেন তুগসি । যৌন হয়রানির শিকার হওয়া দুই জার্মান নারীকে উদ্ধার করতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হলে দুই সপ্তাহ লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। এরপর খুলে ফেলা হয় তার লাইফ সাপোর্ট। নিভে যায় চিরতরে তার জীবন প্রদীপ।
২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর হাজার হাজার জার্মান হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এক তুর্কি তরুণীকে নীরবে চির বিদায় জানিয়েছিলেন। তাদের সবার চোখে ছিল অশ্রু। প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে ‘আমরা তোমাকে কখনো ভুলব না’, ‘আমরা তোমার কাছে ঋণী’।
দুই জার্মান নারীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দেয়ার ঘটনায় জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন ‘তার এই সাহসী কর্মের জন্য সে আমাদের কাছে একটি রোল মডেল’। মুসলিম ওই তরুণীর সাহস আজও জার্মানসহ বিশ্বের হাজার হাজার নারীর জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি রোল মডেল। তারা তাকে আজও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেন। তার এই সাহসী কর্মের জন্য মরে গিয়েও তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন হাজার বছর।
২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর জার্মানির ওফেনবিচ শহরের একটি রেস্টুরেন্টের বাথরুমের সামনে দুই নারীকে যৌন হয়রানি করছিল সার্বীয় বংশোদ্ভূত তিন পুরুষ। তখন সাহায্যের জন্য ওই দুই নারী চিৎকার করছিল। তাদের চিৎকার শোনে ছুটে যান তুগসি। তখন স্যানাল (১৮) নামে আক্রমণকারীদের একজন তুগসিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করে।
দুই সপ্তাহের কোমা থেকে তুগসি শিগগিরই সুস্থ্য হয়ে ওঠবে- এমন একটি সুখবরের জন্য তার পরিবার এবং বন্ধুরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ২৬ নভেম্বর চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, মস্তিষ্কের আক্রমণে তুগসি নিহত হয়েছেন। তারা সেদিনই তুগসির লাইফ সার্পোট খুলতে চাইলে অমত করেন তারা বাবা-মা। কেননা তার দু’দিন পর অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর ছিল তার ২৩তম জন্ম তারিখ। বাবা-মায়ের ইচ্ছা সে দিনই খোলা হোক তার লাইফ সার্পোট। তাদের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে ২৮ নভেম্বর এটি খুলে ফেলা হয় এটি।
এর আগে ২৭ নভেম্বর ওই রেস্টুরেন্টের সামনে (যেখানে ধস্তাধস্তির সূত্রপাত হয়ছিল) শত শত জার্মান নীরব প্রতিবাদে সাহসী ওই তরুণীকে বিদায় জানান। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এবং তুগসির ছবি সম্বলিত টিশার্ট পরে তারা তুগসিকে স্মরণ করে ওই ঘটনার নীরব প্রতিবাদ জানান। টিশার্টে তুগসির ছবির নিচেই লেখা ছিল ‘আমরা তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমরা তোমাকে কখনো ভুলব না’ এবং প্ল্যাকাডে লেখা ছিল ‘আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ’।
জার্মান সাবেক প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম গোয়াকও এ ঘটনায় তুগসির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিকদের মতো আমিও ভয়ানক ওই আক্রমণের ঘটনায় অত্যন্ত শোকাহত। তুগসি অবশ্যই সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। তার এই সাহসী কর্মের জন্য সে সব সময়ই আমাদের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।’
এখানেই শেষ নয়, প্রতিবছর ২৭ নভেম্বর তুগসিকে স্মরণ করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে জমায়েত হন হাজার হাজার জার্মানি এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা নীরবে অশ্রু বিসর্জন করেন তুগসির জন্য। শুধু জার্মানিরাই নয়, তুগসির জন্য অশ্রু বিসর্জন করেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় তাকে।