:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। আজ সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ওই অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এটি চলতি মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যা। একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। দুই জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উঁচু স্থান, স্কুল বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ। কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে-এক কথায় নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ।
একদিনে বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটবাসী। হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। অবাক হয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকার একটি চেরাপুঞ্জিসহ ভারতের আসাম মেঘালয়ে গত তিন দিনে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে, যা গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, সিলেট সংলগ্ন মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৯৭২ মিলিমিটার। একই রাজ্যের শিলংয়ে ১০১, আসামের গৌহাটিতে ৪২ আর ধুব্রিতে ৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে বৃহস্পতিবার বৃষ্টি হয়েছে ৬৭৪ মিলিমিটার।
প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট ঢল ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলকে ডুবিয়ে দিয়েছে – এখন এ কথা সবারই জানা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বইতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রপাতসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (৮৯ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি) থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। আজ সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশেই বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সময়ে দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে, ২৩৯ মিলিমিটার।
এছাড়া কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১৩৫, ময়মনসিংহে ১২৭, নেত্রকোনায় ২০৬, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৮৮ ও সিলেটে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এসময় ঢাকায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি
পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন শনিবার দুপুরে বন্যার ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সমন্বয় সভায় এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে দুর্গতদের জন্য দ্রুত উদ্ধার করা যায় বা জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যায় সেজন্য প্রশাসনের তরফ থেকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য করা হচ্ছে।
উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি শনিবার থেকে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ড যুক্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ইতোপূর্বে প্লাবিত এলাকায়ও বন্যার পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। সুরমা নদীর পর কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের পর এবার সিলেটও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন
সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ জানান, শনিবার বেলা ১২টার দিকে সিলেটে বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরণ হলে আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।
প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্লাবিত এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে।
বাস চলাচল বন্ধ
বন্যার কারণে সিলেটের সঙ্গে সব উপজেলার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের
পরিবহন নেতা আবদুল গফুর বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে সিলেটের কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে পানি জমে গেছে। সিলেটগামী বিভিন্ন সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে কিছু যানবাহন চলছে এখন। কিন্তু যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যাবে।
তিনি জানান, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ছাড়া সিলেটের অন্যসব উপজেলার সঙ্গে বাস চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এবার বন্ধ সিলেট রেলওয়ে স্টেশন
সিলেটে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রেললাইন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেলওয়ে স্টেশন। ফলে সারা দেশের সঙ্গে এখন রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সিলেটের। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকবে।
সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার নুরুল ইসলাম শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশন আপাতত বন্ধ থাকবে। ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে এখন সরাসরি সিলেট স্টেশনে কোনো ট্রেন আসবে না।
স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আরও জানান, সকালে সিলেট স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে ‘কালনী এক্সপ্রেস’ এবং ‘জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস’ ট্রেন ছেড়ে গেছে। এখন ট্রেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও স্টেশন এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়া স্টেশন থেকে সম্ভবত চলাচল করবে।