:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া প্রায় ৪৮ হাজার টাকা কমানোর সুপারিশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন মাদানীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, জিন্নাতুল বাকিয়া, তাহমিনা বেগম ও রত্না আহমেদ অংশ নেন।
এবার হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এ থেকে কমিয়ে কমিটি বিমান ভাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে।
বৈঠক শেষে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী সাংবাদিকদের বলেন, বিমানের পক্ষ থেকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হজ পবিত্র ধর্মীয় বিষয়। এখানে ব্যবসা বা লাভের চিন্তার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে বিমান ভাড়ায় ভর্তুকি দেওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, হাজিদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পাঠানোর নজির রয়েছে। কিন্তু তাঁরা যাওয়ার পর কোনো কাজ করেন না। কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সচেতন হতে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে পবিত্র হজ প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগেই বিমানভাড়া বাড়ানোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি। আজকের বৈঠকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, বিমান পরিচালনার ব্যয় ও কর বৃদ্ধি, একমুখী পরিবহনসহ নানা কারণে বিমানভাড়া বাড়াতে হয়েছে।
তাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, সম্প্রতি ডলার ও রিয়ালের বিনিময় হার অনেক বেড়েছে। ২০২২ সালে হজের সময় ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ১০ পয়সা। এ বছর এই হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৬ টাকা। ফলে বিমানভাড়া বেড়েছে। বর্তমানে বিমানের জ্বালানি তেলের দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। তবে আলোচনা শেষে কমিটি বিমানভাড়া কমানোর সুপারিশ করে। এ ছাড়া বৈঠকে হজযাত্রীদের চিকিৎসার জন্য যে মেডিকেল টিম পাঠানো হয়, সেখানে হার্ট, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের অন্তর্ভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বিমানভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে সংসদীয় কমিটি সন্তুষ্ট হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বিমানের এমডিকে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সারা জীবন লস করেছে বিমান। এখন হজযাত্রা নিয়ে তাদের লাভ করার দরকার কী? সরকার তো সব জায়গায় ভর্তুকি দিচ্ছে। প্রয়োজনে এখানে ভর্তুকি দিতে পারে। নির্বাচনের সামনে রেখে এমন প্যাকেজ ঘোষণায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
২০২৩ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশির হজে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৫ মার্চ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ৮ হাজার ৩৬৩ জন। বাকি ৪০ হাজার ৫৮ জন বেসরকারি পর্যায়ে নিবন্ধিত করেছেন।
এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। সংসদীয় কমিটি বিমানভাড়া কমানোর পাশাপাশি প্যাকেজ থেকে আরও টাকা কমানোর সুপারিশও করেছে বলে জানান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী।
কমিটির একাধিক সদস্য মন্ত্রণালয়কে বলেছে, হজে যেতে এত টাকা শোনার পরে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ কমে গেছে। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যয় বেশি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তাতেও মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। এতে সরকারের ইমেজ সংকটেও পড়বে।