:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবিতে আগামী ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা নিশ্চিত‒ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা জিততে পারবেন না। দশটির বেশি আসন পাবেন না।
সরকার গণতন্ত্রবিরোধী হলেও তারা বাইরে দেখাতে চায় যে তারা গণতন্ত্রের পক্ষে‒ এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ না করলে এবং কুড়ি লাখ টাকা না দিলে কারো চাকরি হচ্ছে না।
ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হিরো আলম বাচ্চা ছেলে, খুব কষ্ট পেয়েছি আমি। অন্তত তাকে ভোটটা করতে দেবে, কিন্তু আওয়ামী লীগ তাকে করতে দেয়নি। ওরা এই দেশকে বাপের তালুকদারি মনে করে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ঢাকা ছাড়া কোথাও বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যায় না। কৃষক ভাইরা সেচের জন্য বিদ্যুৎ পায় না। ডেঙ্গু চিকিৎসার বেহাল অবস্থা, হাসপাতালে সিট নেই। মশা মারার ব্যবস্থা নেই। তারা জনগণের পকেট থেকে টাকা কাটতে ব্যস্ত।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার ভীরু, কাপুরুষ। তারা নির্বাচনে ভয় পায়। আমরা এই মুহূর্তে নির্বাচন চাই, কিন্তু তাদের অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। বিএনপিকে ভয় পায় বলে সরকার এত মামলা দিচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গায়েবি মামলা আবার শুরু হয়েছে। গত সাত মাসে ৫০টি গায়েবি মামলা হয়েছে, আসামি ১ হাজার ৭০১ জন। এটা কীসের আলামত। ওদিকে বিদেশিদের বলছে যে, ভালো নির্বাচন হবে। ইতোমধ্যে নতুন কৌশল শুরু করছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মামলা শেষ করে দ্রুত সাজা দেওয়া শুরু করছে। সকল ডিসি-এসপি পছন্দ মত নিয়োগ দিচ্ছে। উদ্দেশ্য‒ এবার দিনের আলোয় কৌশল করে ভোট নিয়ে যাবে। কিন্তু এবার এটা হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, এই কারণে অবিলম্বে এই হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কাল বিলম্ব না করে পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ-নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাসহ ফরমায়েশি সাজা বাতিল, সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে আগামী ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলকে দমনে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে তারা (সরকার) বিরোধী দলকে দূরে রেখে নির্বাচন করার অপকৌশল করছে। কিন্তু নির্দলীয় সরকার ছাড়া এবার কোনো নির্বাচন হবে না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দাবি একটাই, সেটা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই দাবিতেই ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে।’
এর আগে দুপুর ২টা ১৮ মিনিটে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। তবে দুপুর ২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরুর আগে মঞ্চ ভেঙে পড়ে। পরি একটি পিকআপ ভ্যান এনে সেটিতে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সমাবেশ পরিচালনা করা হয়।
সমাবেশে আরও বক্তব্যে দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে তারুণ্যের এই সমাবেশ গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়। এরপর ১৯ জুন বগুড়া, ২৪ জুন বরিশাল, ৯ জুলাই সিলেট ও ১৭ জুলাই খুলনায় সমাবেশ হয়। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ১১ দফা দাবিতে রাজধানীতে ঢাকা বিভাগের তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে এ কর্মসূচি শেষ হলো।