:: গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি ::
গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন সেনাসদস্য ও সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন। গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কর্মসূচি চলাকালে বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেনা টহল দলের ওপর হামলা করে।
এ ঘটনায় ৩ জন অফিসার, ১ জন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও ৫ জন সেনা সদস্য আহত হন। ২ জন সাংবাদিক আহত হন।
বেলা ৩টায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে গোপীনাথপুর, জালালাবাদ ও নিজাম কান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। রাস্তার দুই পাশে আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। সাড়ে ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়। জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের সেনাবাহিনী রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার কথা বললে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তাঁরা। এ সময় তাঁরা সেনাবাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করলে স্থানীয় জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও কয়েকটি পরিবহন ভাঙচুর করে এবং সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ সময় ছিনিয়ে নেওয়া হয় সেনাবাহিনীর একটি স্টেনগান ও গুলিভর্তি একটি ম্যাগাজিন। পরে এক পুলিশ সদস্য সেটি উদ্ধার করে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আমিনুল হক লাচ্চুর কাছে জমা রাখেন। সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার শরিফপাড়া পেট্রলপাম্পের সামনে থেকে কর্নেল সাফায়েতের কাছে অস্ত্রটি হস্তান্তর করা হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নিলে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আমিনুল হক লাচ্চু বলেন, ‘বিক্ষোভের সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি অস্ত্র রেখে দেয় তারা। বিষয়টি জানতে পেরে সেখান থেকে অস্ত্রটি উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
শনিবার সকাল ১১টায় কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠন সহ বিভিন্ন ইউনিয়ন সমূহ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী কোটালীপাড়া উপজেলা চত্বরে জড়ো হতে থাকে। মিছিলটি উপজেলা চত্বর থেকে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে শপথগ্রহণ ও বঙ্গবন্ধুসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
মিছিল ও শপথে নেতৃত্ব দেন- কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ সময় নেতারা সমবেত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শপথ করছি যে, যতদিন পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে না আনবো ততদিন পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আমি আরও শপথ করছি যে, তার ওপর ঘটে যাওয়া সকল প্রকার অন্যায়ের প্রতিশোধ নিবো। আজ থেকে আমাদের আন্দোলন শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা। আমাদের এই শপথ মহান রাব্বুল আলামীন কবুল করুক। আমিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম অহিদুল ইসলাম, হাজী কামাল হোসেন শেখ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা, সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন খান, দপ্তর সম্পাদক মিজানুর রহমান বুলবুল তাজ, যুবলীগ সভাপতি ফজলুর রহমান দিপু সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু, সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাজরা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি খায়রুল রাজ্জাক খসরু, সহ-সভাপতি মো. কামরুল হাসান শাহ, সাধারণ সম্পাদক বাবলু হাজরা ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত সাধারণ জনতা উপস্থিত ছিলেন।
গোপালগঞ্জে সেনা টহল দলের ওপর হামলা নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে আইএসপিআর। এতে বলা হয়েছে, ১০ আগস্ট গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার গোপীনাথপুরে বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেনা টহল দলের উপর হামলা করে। বিক্ষোভকারীরা গোপালগঞ্জ ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দায়িত্ব পালনরত সেনাবাহিনীর ২টি টহল দল ঘটনাস্থলে গমন করে। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সেনা টহল দলের উপর ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করলে তিন জন অফিসার, একজন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও পাঁচ জন সেনা সদস্য আহত হন।
আন্ত বাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আহত সেনাসদস্যরা আশঙ্কামুক্ত ও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনা টহল দল ৪ রাউন্ড এ্যামোনিশন ফায়ার করে। পরিস্থিতির তীব্রতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।