■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ঢাকাসহ দেশের দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫০০ জন। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে জেলায় তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নরসিংদীর মাধবদীতে ভূকম্পনটির উৎপত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭।
নরসিংদীতে ভূমিকম্পে নিহত ৫
ভূমিকম্পে নরসিংদীতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জেলার প্রায় সব উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নরসিংদী শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার অনেক ভবন ফেটে ও হেলে পড়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন, নরসিংদী সদর উপজেলার গাবতলি এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে দেলোয়ার হোসেন (৩৭), তার শিশু সন্তান ওমর মিয়া (১২), পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামের কাজেম আলী ভূইয়া (৭৫), ডাঙ্গা ইউনিয়নের ইসলামপাড়া নয়াপাড়া গ্রামের সিরু মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন (৬০) ও শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আজকিতলা গ্রামের মৃত শরাফাত আলীর ছেলে ফোরকান মিয়া (৪৫)।
সকাল ১০ টা ৩৮ মিনিটে কেঁপে উঠে গোটা জেলাসহ আশপাশের জেলা। ক্ষণিকের মধ্যেই মানুষ হুড়োহুড়ি করে সড়কে বেরিয়ে আসে। বড় কোনো ভবন ধসের ঘটনা না থাকলেও ছোট ছোট ফাটল দেখা দিয়েছে বহু ভবন ও বাড়ি-ঘরে। এ সময় নরসিংদী শহরের গাবতলি এলাকায় ছয়তলা নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে একতলা ভবনের ওপর পড়লে বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন, ছেলে ওমর মিয়া ও মেয়ে তাসফিয়া আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা-ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পথিমধ্যে ছেলে ওমর মিয়া এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী ওমর ফারুক জানান, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে দেলোয়ার হোসেন তার সন্তানদের নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তারা বাড়ির গেট থেকে রাস্তায় বের হওয়ার সময় ৬ তলা ভবনের দেয়াল ভেঙে তাদের ওপর পড়ে। ওই সময় আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়।
অপরদিকে ভূমিকম্পে জেলার পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামে মাটির ঘর ভেঙে কাজম আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে স্বজনরা পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। একই উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে নাসির উদ্দিন ভূমিকম্পের সময় ফসলি জমি থেকে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়ে আসার সময় রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা যায়। পরে পরিবার লাশ নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এদিকে শিবপুরের আজকিতলায় ভূমিকম্পের সময় গাছ থেকে পড়ে ফোরকান মিয়া আহত হয়। তাকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিসা দিয়ে ঢাকায় নেওয়ার পত্রে তিনি মারা যান।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশানা কবির বলেন, ভূমিকম্পে আহত হয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক নারী পুরুষ চিকিৎসা নিয়েছে। আর গুরুতর কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম দুপুরে গাবতলি এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় শতাধিক আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। যেকোন দুযোগে জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট রয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় আমরা পাঁচজন মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। আমরা সারাদিন জেলায় আহতদের চিকিসার খোঁজখবর নিয়েছি। জেলা প্রশাসনের হটলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে, যেখানে আহত ও ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আর নিহতদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদান করা হবে। আর আহতদেরও চিকিসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত ৫
রাজধানীর বংশালের কসাইটুলী এলাকায় একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বাবা–ছেলে হলেন হাজি আব্দুল রহিম (৪৭) ও মেহরাব হোসেন রিমন (১৩)। একই ঘটনায় মায়ের সঙ্গে বাজার করতে গিয়ে নিহত হন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফি। তার মা নুসরাত গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সময় সংবাদকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া রাজধানীর মুগদার মদিনা বাগ এলাকায় ভূমিকম্পে নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে পড়ে মাকসুদ (৫০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মুগদা মদিনাবাগ মিয়াজি গলিতে ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়রা তাঁকে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় ভূমিকম্পের সময় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে পড়ে এক বছর বয়সি শিশু ফাতেমার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন। ঘটনাটি রূপগঞ্জ থানার ওসি তরিকুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
