রাশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ১৪ দেশে সুনামি সতর্কতা

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

রাশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের জেরে ওশেনিয়া অঞ্চলের তিন দেশ পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও ভানুয়াতুতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ এই সতর্কতা জারি করে। এ নিয়ে বিশ্বের মোট ১৪টি দেশ ও অঞ্চলে সুনামি সতর্ক করা হয়েছে।

রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৮। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ একাধিক দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) আজ পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং ভানুয়াতুর জন্য সুনামি হুমকির সতর্কতা জারি করেছে। বিষয়টি জানিয়েছে পাপুয়া নিউ গিনিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

দূতাবাসটি ওই অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছে, “আপনি যদি উপকূলীয় এলাকায় থাকেন এবং অস্বাভাবিক সমুদ্রস্রোত বা শক্তিশালী ও দীর্ঘ সময় ধরে কম্পন অনুভব করেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে উঁচু স্থানে সরে যান।”

সতর্ক বার্তায় আরও বলা হয়েছে, “পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলীয় অঞ্চল, সমুদ্রসৈকত ও নদীর কাছাকাছি যাবেন না। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য খাবার, পানি, ওষুধ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।”

ফিলিপাইনের ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরি সংস্থা বলেছে, বুধবার দুপুরে এক মিটারেরও কম উচ্চতার সুনামি ঢেউ উপকূলে আঘাত করবে। তাই ফিলিপাইনের ২০টির বেশি প্রদেশের বাসিন্দাদের সমুদ্রের কাছাকাছি না যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ও ভূ-তত্ত্ব সংস্থা পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে। সেখানকার বাসিন্দাদের শান্ত থাকার পাশাপাশি সমুদ্রতট থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো জরুরি উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।

জাপান, হাওয়াই ও যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কামচাটকায় ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার সুনামি ঢেউ দেখা গেছে, আর জাপানের হোক্কাইডো শহরে ৩০ সেন্টিমিটার উচ্চতার ঢেউ আঘাত করেছে।

হাওয়াইয়ের গভর্নর জশ গ্রিন সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও সবাইকে সুনামি সতর্কতা মানতে বলেছেন।

রাশিয়ায় ভূমিকম্পের জেরে এখন পর্যন্ত যেসব স্থানে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া, জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, চীন, হাওয়াই, গুয়াম, ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কা, ওরেগন, ওয়াশিংটন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, মেক্সিকো, পেরু, ইকুয়েডর, নিউজিল্যান্ডও রয়েছে।

বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ১০ ভূমিকম্প

১৯০০ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ভূমিকম্পের রেকর্ড রাখা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস)। বুধবার রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপে যে ভূমিকম্পটি হয়েছে, বিধ্বংসী ক্ষমতা ও শক্তির নিরীখে সেটিকে ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউএসজিএস।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থার ওয়েবসাইটে গত ১২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী ১০টি ভূমিকম্পের তালিকাও দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প: ১৪ দেশে সুনামি সতর্কতা

১।

বিশ্বের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৬০ সালে চিলির বিওবিও প্রদেশে। ৯ দশমিক ৫ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ৬৫৫ জন মানুষ এবং বাড়িঘর ভাঙার জেরে আশ্রয়হীন হন আরও ২০ লাখ মানুষ।

শক্তিমত্তা ও ধ্বংসের বিচারে ১০ম স্থানে রয়েছে ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। সেই ভূমিকম্পে পুরো সুমাত্রাজুড়ে ব্যাপক ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। হাতে গোনা যে কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।

২।

দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় ১৯৬৪ সালে। ৯ দশমিক ২ মাত্রার সেই ভূমিকম্প এবং তার জেরে সৃষ্ট সুনামিতে নিহত হয়েছিলেন ১৩০ জন এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ২৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

৩।

তৃতীয় ভূমিকম্পটি হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ২০০৪ সালে। ৯ দশমিক এক মাত্রার সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ২ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন ১০ লাখ ১০ হাজার জন।

৪।

চতুর্থ ভূমিকম্পটি হয়েছিল জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপে ২০১১ সালে। ৯ দশমিক ১ মাত্রার সেই ভূমিকম্পে প্রাণহারিয়েছিলেন ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি।

৫।

পঞ্চম ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯৫২ সালে রাশিয়ার কামচাটকা ক্রাই উপদ্বীপে। এটি ছিল বিশ্বে রেকর্ডকৃত প্রথম ৯ মাত্রার ভূমিকম্প, যার ধাক্কা এসে লেগেছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত। ভূমিকম্পের জেরে হাওয়াইয়ে ব্যাপক সুনামিও হয়েছিল।

এই ভূমিকম্পে প্রাণহানির কোনো তথ্য পাওয়া যয়নি তবে তখনকার সময়ে ১০ লাখ ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল রাশিয়ায়।

৬।

ষষ্ঠ ভূমিকম্পটি হয়েছিল ২০১০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দেশ চিলির বিওবিও প্রদেশের কিউরিহিউ শহরের কাছে। ৮ দশমিক ৮ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ৫২৩ জনের, ধ্বংস করেছিল ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।

৭।

সপ্তম ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৯০৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের এসরোলডাস শহরে। ৮ দশমিক ৭ মাত্রার সেই ভূমিকম্প প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ১ হাজার ৫০০ মানুষের। ভূমিকম্পটির মাত্রা প্রশান্ত মহাসগারের অপর তীর সান ফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয়েছিল।

৮।

অষ্টম ভূমিকম্পটি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের র‌্যাট দ্বীপে ১৯৬৫ সালে এবং সেটির মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। তবে সেখানে জনবসতি না থাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

৯।

৯ম স্থানে আছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলে ১৯৫০ সালে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। আসাম এবং তিব্বত অঞ্চলেও এর কম্পণ তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছিল বলে এটি আসাম-তিব্বত ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। ব্যাপক কম্পন, ভূপৃষ্ঠ ফাটল এবং বিশাল এলাকাজুড়ে ধসের জেরে সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭৮০ জন।

১০।

শক্তিমত্তা ও ধ্বংসের বিচারে ১০ম স্থানে রয়েছে ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ঘটা ৮ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি। সেই ভূমিকম্পে পুরো সুমাত্রাজুড়ে ব্যাপক ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছিল। তবে ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। হাতে গোনা যে কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *