সারা দেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ নিহত ১০০

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রাত ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন পুলিশ সদস্য। যার মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

দিনভর সংঘর্ষে  নিহতদের মধ্যে ঢাকায় শিক্ষার্থী ও একজন আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৯ জন, সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৩, লক্ষ্মীপুরে ১০, ফেনীতে ৮, নরসিংদীতে ৬, কিশোরগঞ্জে ৪, মুন্সীগঞ্জে ৪, রংপুরে ৫, সিলেটে ৬, মাগুরায় ৪, পাবনায় ৩, বগুড়ায় ৪, কুমিল্লায় ৪, বরিশালে ২, শেরপুরে ২, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, সাভারে ১, হবিগঞ্জে ১, কক্সবাজারে ১ জন, কেরানীগঞ্জ ১ জন রয়েছেন। 

ঢাকা মেডিকেলে ২২৭ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। এদের মধ্যে ৬৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। 

রাজধানীতে দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত

রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী ও একজন আওয়ামী লীগের নেতা।

শান্তিনগরের হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএর ছাত্র আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, কারওয়ান বাজারে কবি নজরুল কলেজের ছাত্র তাহিদুল ইসলাম, শাহবাগে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে অজ্ঞাত পুরুষ, ফার্মগেট এলাকায় ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রমিজ উদ্দিন, ঝিগাতলায় অজ্ঞাত কিশোর, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভ্যানচালক রিয়াজুদ্দৌলা ও পিটিয়ে হত্যার শিকার হওয়া অজ্ঞাত যুবক। এছাড়া মির্টফোর্ড হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয় গুলিস্তানে হামলায় নিহত জহির উদ্দিন রেজাউলের লাশ। অপর দিকে উত্তরায় মারা যান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম। তার মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন। 

আওয়ামী লীগ নেতা ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তিনি উত্তরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে নিহত হন।

রাজধানীর জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে নিহত হন হাবিবুল্লাহ বাহার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী নাম আবদুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)।

কারওয়ানবাজার এলাকায় সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন রূপ (২৪) নিহত হন। তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বিকেলে ফার্মগেট এলাকায় সংঘর্ষে নিহত হন তৌহিদুল ইসলাম (২২)। তিনি মহাখালীর ডিএইট কনসালট্যান্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী।

গুলিস্তান থেকে বিকেলে জহির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাত ৮টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে জুয়েল (২৮) নামে এক যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন কয়েকজন পথচারী।

সারা দেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ নিহত ১০০

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে কলেজছাত্রসহ নিহত ৮

লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক কলেজছাত্রসহ আটজন নিহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. সোহেল রানা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের উত্তর তেমুহনী থেকে ঝুমুর পর্যন্ত এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ নিহত

সন্ত্রাসী হামলায় সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানার ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যও সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন।

ঘটনা সম্পর্কে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, প্রথমে হাজারখানেক মানুষ দলবেঁধে থানার দিকে আসে। সেখানে তাঁরা কিছুক্ষণ অবস্থান করে চলে যায়। পরে কয়েক শ মানুষ অতর্কিতে থানায় এসে হামলা চালায়। তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত ১৩ জন পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারজন মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনজনকে মৃত অবস্থায় এবং একজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসলে এখানে তার মৃত্যু হয়। 

সারা দেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ নিহত ১০০

নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের গুলি, পিটুনিতে আওয়ামী লীগের ৬ নেতা কর্মী নিহত

নরসিংদীর মাধবদীতে আন্দোলনকারীদের দিকে গুলি ছোড়ার পর ধাওয়া দিয়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতা–কর্মীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। রোববার বেলা দেড়টার কাছাকাছি সময়ে সদর উপজেলার মাধবদী পৌরসভাসংলগ্ন মসজিদের অজুখানায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ছয়জনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন চরদিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন (শাহীন), সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই শহর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আজ দুপুর ১২টা থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা একটার দিকে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা–কর্মী সেখানে যান। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাঁদের আন্দোলনস্থল ত্যাগ করতে বলেন, কিন্তু তাঁরা রাজি হচ্ছিলেন না। পরে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে আলামিন (২৫) ও সুমন (৩০) নামের দুজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্য দুজনকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এ সময় বিক্ষোভ থেকে লাঠিসোঁটা হাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তখন নেতা–কর্মীরা পৌরসভা এলাকার বড় মসজিদের ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরে মসজিদের ভেতরে অজুখানায় অন্তত ১০ জনকে উপর্যুপরি মারধর করেন আন্দোলনকারীরা। এতে চরদিঘলদী ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, শহর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আনিসুর রহমানসহ ছয়জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

রংপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের দায়িত্বে থাকা আব্দুল জলিল দুজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও দুজন নিহতের তথ্য জানিয়েছেন।

নগরীর পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার গাড়িচালক সংঘর্ষের সময় নিহত হন। তাদের লাশ সিটি করপোরেশন গেটের সামনে পড়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

সারা দেশে আন্দোলনকারী ও পুলিশসহ নিহত ১০০

পাবনায় আওয়ামী লীগের হামলায় ৩ জন বিক্ষোভকারী নিহত

পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩২ জন।

পাবনার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানা গেছে। সেখানে এখনো গোলাগুলি চলছে বলে জানা গেছে।

বগুড়ায় ৫ জন নিহত

বগুড়ায় সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক অবরোধ করে হাজারো জনতা। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বগুড়া শহর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলা। এখন পর্যন্ত সেখানে ৫ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। 

মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের হামলায় নিহত ৩

মুন্সীগঞ্জে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। সকাল পৌনে ১১টার দিকে শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ধামরাইয়ে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

ঢাকার ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অজ্ঞাত এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। তবে তিনি কখন এবং কীভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক আহমেদুল হক তিতাস বলেন, ‘দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকজন ওই যুবককে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসে। যুবকের পিঠে গুলিবিদ্ধের চিহ্ন দেখা গেছে। মরদেহ এখানে ফেলে সেই যুবকেরা চলে গেছে।’

মাগুরায় নিহত ৪

মাগুরায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নিহত ৩

কুমিল্লার দেবিদ্বারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে উপজেলার নিউমার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভোলায় আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগের হামলায় নিহত ৩

ভোলায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে ৪ জন, লক্ষ্মীপুরে ৮ জন, সিলেটে ৫ জন, বরিশালে ১ জন, শেরপুরে ২ জন ও জয়পুরহাটে ১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *