■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষাসচিবের পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আহতরা হলেন- হাসান (১৮), সেরাতুল (২২), সাকিব (১৯), তানভীর (১৯), অজানা (২০) রিফাত (১৯), রিজন (২০), সামিয়া (১৮), সামির (১৯), তামিম (১৯), অজানা (১৮), ইমন (২০), সিয়াম (১৮), সাকিল (২০), মেহেদী (২০), সাদমান (১৮), মারুফ (২২), সাকিব (১৮), মাহিন (১৯), রোহান (২০), হাসিব (২০), মুগ্ধ (১৯), মাহিম (২০), হাসিব (১৯), সায়েম (১৮), অজানা (২০), জিদান (২০), নিহার (২০), রায়হান (২০), রোমান (১৮), প্রান্ত (১৯), নাহিদ (২০)।
আরও রয়েছেন- অন্তু (২০), বিশাল (২০), ইমরান (২০), আহনাদ (১৮), মাহি (২০), নাঈম (১৮), সামি (১৮), স্বাধীন (২০), তাসিন (১৮), ইমরান (১৯), ধ্রুব (১৯), শান্ত (২০), তানিম (২০), আজহারুল (২০), তন্ময় (১৯), জিসান (১৯), রাসেকুন (২০), পারভেজ (২০), নাঈম (১৯), বিজয় (১৭), আসাদ (২০), নিহার (২০), নাফিজ (১৮), সাহিন (২০), কিশোর (১৮), তানভীর (১৮), ফারদিন (১৯), শাহরিয়ার (২০), অজানা (১৯), সাঞ্জু (১৯), রাইয়ান (১৯), কলি (১৯), আব্দুল খালেক (৬৫), হাসিব (১৮), সিনান (১৮), তাসফি (২২), মামুন (২০), রিফাত (১৮), আসাদ (২১), মাহিন (২০), আতিক (১৮), তানভীর (১৮), হাবিব হাসান (সাংবাদিক, মানবজমিন) (২৪), কনা (২১), ইমন (১৯), ফাহাদ (১৮), ইয়াসিন আরাফাত শান্ত (২০), অজানা (১৯) ও শাকিল (২০)।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ বিকেলের দিকে আহত অবস্থায় আনুমানিক ৮০ জন শিক্ষার্থী ও একজন সাংবাদিককে জরুরি বিভাগে আনা হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।’
এর আগে, বিকেল ৪টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের এক নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। তারা সচিবালয়ে ঢুকে বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুর করে। এর জেরে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে তারা বাইরে চলে যায়।
বাইরে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ভেতরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এরপর পুলিশ সাউন্ড নিক্ষেপ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
দুপুর থেকেই সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন কলেজের অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছে। এমন দুঃখজনক ঘটনার পরও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। হঠাৎ করে রাত ৩টার সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকালে পরীক্ষা দিতে বের হয়ে জানতে পারি পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। এমন দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের জন্য আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ চাই।
জানা গেছে, বিক্ষোভে ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। সচিবালয়ের সামনের গেটে বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় আগে থেকেই সেখানে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের।
দুপুর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়ের-এর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সাইন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজসহ রাজধানীর কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শেষে মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে যান। এ সময় তারা শিক্ষা ভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে সেখান থেকে সচিবালয়ের সামনে এসে বসে পড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সচিবালয়ের সামনে আসার পরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের আলোচনার জন্য ২০ মিনিটের সময় নিয়েছেন। কিন্তু এই সময় অতিবাহিত হলেও সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। পরে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে ঢোকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ ও ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’—এমন স্লোগান দিচ্ছেন।
গাড়ি ভাঙচুরের জেরে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সচিবালয় থেকে বের করে দেন। এর পর সচিবালয়ের সামনে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় লাঠিপেটা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে। এ ছাড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলও ছোড়া হয়েছে।