:: সৌদি আরব প্রতিনিধি ::
পবিত্র কাবার শরীফের প্রধান মূল চাবি রক্ষক এবং উসমান ইবনে তালহা (রা.) এর ১০৯তম উত্তরাধিকারী শেখ সালেহ আল-শাইবা ইন্তেকাল করেছেন। তিনি মক্কা বিজয়ের পর থেকে কাবার ১০৯তম অভিভাবক ছিলেন।
রোববার (২২ জুন) ফজরের নামাজের পর মসজিদুল হারামে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং মক্কার জান্নাতুল মুআল্লা কবরস্থানে তাকে দাফন হয়।
সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় অবস্থিত মহান আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ। কাবা শরিফে বহুকাল ধরেই তালা-চাবির ব্যবহার হয়ে আসছে।
প্রাক ইসলামি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত পবিত্র কাবা শরিফের চাবির দায়িত্ব একটি পরিবারের কাছেই রয়েছে। যা এখনো বর্তমান।
এ সম্মানিত পরিবারটি হলো মক্কার বুন তালহা গোত্র। এ গোত্রের লোকেরা গত ১৫০০ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বনু তালহা গোত্রের সবচেয়ে মুরব্বি তথা বয়স্ক সদস্যরাই উত্তরাধিকার সূত্রে এ দায়িত্ব প্রাপ্ত হন এবং সম্মানের সঙ্গে আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
তবে ‘বনি শাইবা’ নামক এক আরবি গোত্রের কাছে কাবা ঘরের চাবি রক্ষণাবেক্ষণের তথ্যও পাওয়া যায়। যা এ গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিদের জিম্মায় থাকে। দেড় হাজার বছর পূর্বে প্রিয় নবী হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পরিবারের কাছে কাবা শরিফের তালা-চাবি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আরোপ করেছিলেন।
কাবা শরিফের চাবি রাখার জন্য কিসওয়ার কাপড় দ্বারা তৈরি বিশেষ বক্স তৈরি করা হয়। যার মধ্যে রাখা হয় পবিত্র কাবা শরিফের চাবি।
আব্বাসীয়, আইয়ুবীয়, মামলুকীয় ও ওসমানিয়া যুগে কয়েকবার পবিত্র কাবাঘর মেরামত করা হয়েছে। তখন প্রয়োজন মতো নতুন তালা-চাবিও বানানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে পবিত্র কাবাঘরের চাবি পরিবর্তন করা হয়। সেই তালা-চাবিই এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
উসমান ইবনে তালহা (রা.) সাহাবি হজরত উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর বংশধর। বিখ্যাত আরব গোত্র কোরাইশের উপশাখা বনু শায়বার শায়খ যাইনুল আবেদীন আশ-শায়বির ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন।
বনু শায়বা গোত্র মক্কা বিজয়ের পূর্ব থেকে পবিত্র কাবা ঘরের চাবি সংরক্ষণ করে আসছিল। ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয় হলে কাবায় প্রবেশের জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী (রা.)-কে কাবার চাবি নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। হজরত উসমান ইবনে তালহা (রা.) তখনও ইসলাম গ্রহণ করেননি। আবার মক্কা বিজয়ের আগে নবী মুহাম্মদ (সা.) কাবায় প্রবেশ করতে চাইলে তালা খুলে না দিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহার করেছিলেন। তাই মক্কা বিজয়ের পর চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হবে, তার পরিবারের সম্মানহানি ঘটবে। তাই পবিত্র কাবা রক্ষার সম্মান নিজ পরিবারের কাছে রাখতে তিনি চাবিসহ লুকিয়ে ছিলেন।
পরে নবী কারিম কাবায় প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন, এ সময় হজরত জিবরাঈল (আ.) অহি নিয়ে কাবার ভেতর অবতরণ করেন। অহিতে আল্লাহতায়ালা কাবার চাবি উসমান ইবনে তালহাকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আয়াতটি ছিলো সূরা নিসার ৫৮ নম্বর আয়াত। অর্থ : ‘নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের ফিরিয়ে দেওয়ার।’
আয়াত নাজিলের পর সঙ্গে সঙ্গে নবী মুহাম্মদ (সা.) হজরত উসমান ইবনে তালহাকে ডেকে কাবার চাবি হস্তান্তর করেন। আর বলেন, ‘এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত এ চাবি তোমার বংশধরের হাতেই থাকবে। তোমাদের হাত থেকে এ চাবি কেউ নিতে চাইলে সে হবে জালেম।’
তখন হজরত উসমান ইবনে তালহা (রা.)-এর মক্কা বিজয় পূর্ববর্তী দুর্ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়াস্বরূপ রাসুল (সা.) তার বাঁধা মেনে নিয়ে যে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন সে কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে তিনি বলেছিলেন, হে উসমান! একদিন তুমি এই চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে। আমি তখন যাকে ইচ্ছে চাবিটা দিবো।
অন্য কাউকে বুঝিয়ে না দিয়ে তাকেই চাবি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ও এর পেছনের কাহিনী জানতে পেরে তিনি বুঝতে পারেন, ইসলাম সত্য ধর্ম। নবী মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করে নেন।
এর পর থেকে তার বংশধরেরা পর্যায়ক্রমে পবিত্র কাবার চাবি বহন করে আসছেন। তাদের কাছ থেকে চাবি নিয়েই সৌদি আরবের বাদশাহ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ পবিত্র কাবা ঘরে প্রবেশ করে থাকেন। তারাই কাবার দরজা খুলে দেন। এমনকি পবিত্র কাবার গিলাফ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতায় থাকে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।