■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী ১১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করা শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাত বরণকারী অজ্ঞাত শহীদদের লাশ উত্তোলন ও শনাক্তকরণ কার্যক্রম সম্পর্কে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান সিআইডি’র প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
তিনি আরও বলেন, এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে এ ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে অজ্ঞাত শহীদদের পরিবার আবেদন করেছে। আদালতের নির্দেশে এ সব কাজ পরিচালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে কবরস্থান থেকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে।
সিআইডি’র প্রধান বলেন, লাশ শনাক্তের জন্য ইতোমধ্যে ১০ জন আবেদন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শহীদের সংখ্যা ১১৪ জনের বেশি। প্রকৃত সংখ্যা লাশ উত্তোলনের পর জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, লাশগুলোর পোস্টমর্টেম করা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিচয় শনাক্ত হলে, পরিবার চাইলে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিএনএ সংগ্রহের পর, যে কেউ আবেদন করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সিআইডি’র হটলাইন নম্বরগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।
এ সময় ইউনাইটেড নেশনস হাই-কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের (ইউএনএইচআর) সহযোগিতায় আগত আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডি’র সঙ্গে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি, কাজগুলো আন্তর্জাতিক ফরেনসিক মানদণ্ড অনুসরণ করেই সম্পন্ন হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা এ কার্যক্রমে অংশ নেন। শহীদদের পরিবারের সদস্যরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘আমার ছেলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিতে ১৮ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। এরপর যাত্রাবাড়ী থেকে নিখোঁজ হয়েছে সে। আজও লাশটা খুঁজে পাইনি। অনেক খুঁজেছি, পাইনি। আমি ছেলের লাশটা অন্তত চাই।’
রাশেদা বেগম নামের এই মা বলেন, তাঁর ছেলের নাম সোহেল রানা। অভ্যুত্থানের পর থেকে ছেলের কোনো খোঁজ পাননি তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অজ্ঞাতনামা শহীদদের গণকবর এলাকাটি সাদা কাপড় দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। পাশেই অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। শুধু অজ্ঞাতনামা শহীদদের পরিবারের সদস্যরা ঢুকতে পারছেন।
