রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১২ ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ও ৩টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও আতঙ্ক দেখা দেয় রাজধানীজুড়ে। 

এছাড়া রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবিস্ফোরিত একটি ককটেল পাওয়া গেছে।

এনসিপির মিডিয়া সেল সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যারা ঘটিয়েছে তাদের মধ্যে একজনকে এনসিপির নেতাকর্মীরা ধরেছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বেতার গেটের সামনে, খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকায়, মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটের সড়কের পাশে এবং মৌচাক ক্রসিংয়ে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ হয়।

এনসিপি কার্যালয়ের সামনে অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়ার বিষয়ে ডিএমপির রমনা থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক মো. আমজাদ বলেন, রাতে এনসিপির কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় বাংলামোটরে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া গেছে। সেখানে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ বিষয়ে এর থেকে বেশি তথ্য আমার কাছে নেই।

অন্যদিকে ডিএমপির শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমাউল হক বলেন, আগারগাঁও এলাকার বাংলাদেশ বেতার গেটের সামনে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং বিস্ফোরিত ককটেলের খোসা উদ্ধার করেছে।

এদিকে দুষ্কৃতিকারীরা সন্ধ্যা ৬টার দিকে মৌচাক ক্রসিংয়ে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া, খিলগাঁও ফ্লাইওভারে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে আরও একটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়।

অপরদিকে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেটের সড়কের পাশে দুষ্কৃতিকারীরা তিনটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ধানমন্ডি এলাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর চারটি স্থানে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মিরপুরের গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি, মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে ‘প্রবর্তনা’র সামনে ও ভেতরে দুটি, ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারের সামনে দুটি এবং ধানমন্ডি ৯/এ এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে আরও দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়।

মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি গতকাল রোববার দিবাগত রাত ২টা ২৬ মিনিটে এবং অপরটি ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে বিস্ফোরিত হয়। দুটি ককটেল অভ্যর্থনা কেন্দ্রের সামনে বিস্ফোরিত হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবনেরও কোনো ক্ষতি হয়।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হামলাকারীরা দুটি মোটরসাইকেলে করে মিরপুর ১০ নম্বরের দিক থেকে আসে, এরপর ভবনের সামনে মোটরবাইক থামিয়ে পেছনে বসা হেলমেট পরা ব্যক্তি সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে ককটেল ছুড়ে মেরে মিরপুর-১ নম্বরের দিকে পালিয়ে যান। এরপর আরও একটি মোটরসাইকেলে করে প্রায় এক ঘণ্টা পর আরও দুজন একই কায়দায় এসে ককটেল ছুড়ে চলে যান। তবে তাঁদের মুখ দেখা যায়নি। ঘটনার পর আলামত ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েছে পুলিশ।

মিরপুর মডেল থানার ফটক থেকে আনুমানিক এক শ গজ দূরে গ্রামীণ ভবনের ফটক। থানা ফটকে ও গ্রামীণ ব্যাংক ভবনের সামনে সব সময় পুলিশের পাহারা থাকে। এর মধ্যেই এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে হামলার পর সকাল ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের সৈয়দ স্যার সড়কের ৬/৮ ভবনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনা ও বীজবিস্তার ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।

দুজন হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার নিরাপত্তাকর্মী মো. মোস্তফা।

এ ছাড়া ভোরে শাহজাদপুরে ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস এবং সকাল সোয়া ৬টার দিকে মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কাছে আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *